জুনাইদ কবির, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
'মে ফ্লাওয়ার', নতুন স্বপ্ন নিয়ে মাটি ভেদ করে জাগে যে প্রাণ
'মে বল '। নামেই আছে ভিন্নতা। তেমনি কোন ফুলই 'মে ফুলের' মত এত নিয়ম মেনে ফুটে না। মে মাসে এই ফুল ফুটে বলে এর নাম কেউ কেউ 'মে ফুল' বলেও ডাকে। কিন্তু উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের দেয়া নাম 'মে বল'। যে ফুল বছরের পর বছর ধরে একই নিয়মে ফুটছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের নারগুন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আব্দুল জলিলের বাড়িতে মে মাসের মাঝামাঝি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ফুটেছে মে বল।
আব্দুল জলিল জানান, দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ মে বল ফুটছে তার বাড়ির বাগানে। ১১ মাস ফুলের টব ফাকা থাকলেও মে মাস এলেই যেন মে বলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে ফাকা টপগুলো। তখন ফুল দেখলেই যেন তার চোখ জুড়িয়ে যায়।
মে মাস আসার আগেই টবের মাটির নিচে পেঁয়াজের গুঁড়ির মতো একটি অংশ উঁকি দেয়। তখন দেখে মনে হচ্ছিল এ থেকে কোন গাছ বের হবে। কিন্তু কী আশ্চর্য, ঠিক মে মাসের শুরুতে মে বলের কলি বের হওয়া এবং মাঝামাঝি সময়ে এসে পুর্নাঙ্গ মে বলের দেখা মিললো, বলেন বাগান মালিক জলিল।
তিনি মে ফুলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, নরম সবুজকান্ডের ঠিক মাথায় হালকা লাল রঙের বলটি স্থির হয়ে বসে আছে। ক্রমেই ফুলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আকারে বড় হয়েছে। সৌন্দর্যটাও উপভোগ করার মতো। ঘ্রাণ নেই বললেই চলে। তবে দেখতে এত ব্যতিক্রম যে, ভিন্ন এই ফুলের দিকে চোখ যাবেই। যারা আগে কখনো মে বল দেখেননি তারা প্রথমবার ফুলটি দেখলে চোখ সরাতে ইচ্ছে করবে না। বাগানের অন্যান্য ফুলগুলো হয়তো মে মাসের অতিথি মে বলকে দেখার জন্যে অপক্ষোর প্রহর গুনে থাকে।
মে মাসে ফুটে বলেই এর নাম মে ফ্লাওয়ার। গোলাকার দেখতে হওয়ায় ফুলটিকে বল লিলিও বলা হয়। একই কারণে বলা হয় লিলি। পাউডার পাফ লিলি, আফ্রিকান বাড লিলি নামেও এটি পরিচিত। তবে মে ফ্লাওয়ার হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
এ ফুলের পাপড়ি অন্যান্য ফুলের মতো হয় না। এমনকি পাপড়ি হয় না বললেও চলে। গড়নের দিক থেকে কদম ফুলের সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়। তবে কদমের চেয়ে আকারে বড়। হালকা রংয়ের ফুল। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে গোলাকার ফুলটি কাঁটায় ঘেরা। অনেকগুলো সুচ মুখ বের করে আছে। হাত বাড়ালেই বিপদ! আদতে তা নয়। ফুলের গায়ে আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিলে নরম কোমল একটা অনুভূতি হয়। ফুলটিতে হলুদ রঙের অস্তিত্ব আছে। সেটি চোখে তেমন পড়ে না। তবে হাত দিলে আঙ্গুলে হলুদ রং লেগে যায়। সাদা জামা পরে ফুলের কাছে গেলে হঠাৎই দেখা যাবে, জামায় হলুদের ছিটে ফোঁটা লেগে আছে।
জানা যায়, মে ফ্লাওয়ারের অস্তিত্ব প্রথম আবিষ্কৃত আফ্রিকা মহাদেশে। বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে হয়। বাংলাদেশেও অনেকদিন ধরে আছে। মে বলের গাছ ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ফুল প্রায় ৩ সে মি চওড়া হয়।
মে ফ্লাওয়ার মে মাসের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়। কখনো কখনো একটি গাছে একাধিক ফুল হয়ে থাকে। পরিণত ফুল অক্ষত অবস্থায় ঝরে পড়ে না। আস্তে আস্তে ফুলের বিভিন্ন অংশ খসে পড়তে থাকে। এক সময় হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো চুপসে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অবশ্য ততদিনে একই গাছে নতুন ফুল ফুটতে শুরু করে। এভাবে মে মাসের প্রায় পুরোটাজুড়েই দেখা যায় এই ফুল। সব ফুল ঝরে পড়ার পর লম্বা সবুজ পাতার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। কয়েক মাস এই পাতারা সতেজ থাকে। তারপর পাতা কান্ড কিছুই থাকে না। আবার মে মাসে দেখা দেবার কথা দিয়ে চোখের আড়ালে চলে যায় গাছ ও ফুল। শূন্য টব দেখে মনেই হয় না, এর মাটির নিচে আবার জাগার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে আছে কোন তাজা প্রাণ!