মো.আজাদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা

  ২৩ মে, ২০২২

কেঁচো ও জৈবসারে সোনালি দিনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

রাসায়নিক সারের বদলে কম খরচে কেঁচো ও জৈবসার ব্যবহার করে বেশি বেশি ফসল উৎপাদনে সোনালি দিনের স্বপ্ন বুনছেন চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা। র্দীঘদিন ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে মাটির উরবরতা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এতে উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ক্রমেই চাষীরা হতাশ হয়ে পড়ছিলেন।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এলাকার কৃষকসমাজ অবশেষে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কেঁচো সার ও জৈব সারের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এর ফলে তাদের ফসলের গুণাগুণ বৃদ্ধিসহ কৃষিপণ্যের আশাতীত উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা আগামী দিনের রঙিন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের পীতম্বপুর গ্রামের আবু বকরের ছেলে আশাবুল হক পেশায় একজন ভূমিহীন প্রান্তিক চাষী। তিনি বাড়ির সঙ্গে পতিত জমিতে বেসরকারি সাহায্য সংস্থা আশার এমএসএমই চুয়াডাঙ্গা শাখার আর্থিক সহায়তায় গড়ে তোলেন কেঁচো সার ও জৈব সারের কারখানা। আশাবুলের লিজ নেয়া সাড়ে তিন বিঘা জমিতে গড়ে তোলা “ভার্মি কম্পোস্ট ও জৈব সার প্রকল্প” দেখে তারা ২০২০ সালে ১০ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল ১২ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেন। ২৫ জন শ্রমিক দৈনিক ৪’শ টাকা মজুরিতে এখানে কাজ করছেন। এখান থেকে প্রতি কেজি কেঁচোসার ১০ টাকা এবং জৈব সার ৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা “ভার্মি কম্পোস্ট ও জৈব সার প্রকল্প” পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশসহ কৃষিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে এর উদ্যোক্তা আশাবুল হককে সন্মাননা স্মারক প্রদান করেছেন। এছাড়া এব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। আলোচিত এই প্রকল্পটি পরিদর্শন করে গেছেন বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইউনিটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রজনন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড.আনিছুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. মেজবাহ উল আলম, কাজী ফার্ম লিমিটেডের ম্যানেজার মো. জামিরুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

“ভার্মি কম্পোস্ট ও জৈব সার প্রকল্প”র উদ্যোক্তা মো.আশাবুল হক “প্রতিদিনের সংবাদ”কে বলেন, কেঁচো, গোবর ও কচুরিপানা পচিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার এবং গোবর, ছাই, চিটাগুড় টাইকোডার্মা এবং পোল্ট্রি বিষ্ঠার সংমিশ্রণে জৈবসার উপাদন করা হয়ে থাকে। যা সবজি, ফল ও ফসলের কোনো রকমের ক্ষতি ছাড়াই অধিক কার্যকর।

চাষী লুৎফর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, এই কেঁচো সার ও জৈবসার ক্ষেতে প্রয়োগ করে তারা তাদের ভুট্টা, পেঁপে, কলায় আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন। সবজিচাষী একরামুল হক বলেন, আমাদের ক্ষেতে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরতা শক্তি একদম কমে গিয়েছিল। আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমার পেয়ারা, মাল্টা এবং আলুর ক্ষেতে এই সার প্রয়োগ করে আমি কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে খুশি।

বেসরকারি সাহায্য সংস্থা আশার এমএসএমই চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক তরিকুল ইসলাম জানান, আমরা আশাবুল হকের প্রকল্পটি দেখে খুশি হয়ে স্ব-উদ্যোগে তাকে ঋণ দিয়েছি। যদি আরো কেউ এভাবে উদ্যোগ নিয়ে মানবকল্যাণে এগিয়ে আসে তাহলে তাকেও বা সেই প্রতিষ্ঠানকেও আমরা সবধরনের আর্থিক সহায়তা দিতে সবসময় প্রস্তুত আছি।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা জেলার কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে আশাবুলের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমরা এরকমের উদ্যোগকে সহযোগিতা করব।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চুয়াডাঙ্গা,কৃষি সম্প্রসারণ,রাসায়নিক সার,কেঁচো ও জৈবসার
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close