আরিফ খাঁন, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)

  ২২ মে, ২০২২

লাঠিতে ভর করে ফুল বিক্রি, মেলে না বয়স্ক ভাতা

পাবনা বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের বকচর গ্রামের জুলহাস শেখ। তাঁর বয়স পেরিয়েছে ৮০ বছর। অথচ এই বয়সেও তাকে জীবিকা নির্বাহ করত পথে নামতে হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নজরে না পড়ায় কপালে জোটেনি কোনো ভাতা। জুলহাস শেখ নিজেও জানেন না বয়স্ক ভাতা পেতে হলে আর কত বয়স হতে হবে। ছেলেমেয়েরাও দরিদ্র হওয়ায় বাবা-মাকে ভরণপোষণে দায় নিতে পারছেন না তারা। তাই বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে পথে ঘাটে ফুলের মালা বিক্রি করেন জুলহাস শেখ। যা পান তাই দিয়ে নিজের ও স্ত্রীর খাবার চলে কোনোমতে।

বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের বকচর গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ এই জুলহাস শেখের। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন উপজেলার কাশিনাথপুর বাজারে দুই হাতে লাঠি ভর করে বকুল ফুলের মালা বিক্রি করছেন। হাত-পা কাঁপছিল তার। ঠিকমতো হাঁটতেও পারছিলেন না। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে এ প্রতিবেদকের।

এ সময় তার সাথে আলাপকালে জানা যায়, এক ছেলে, তার সংসারেও টানাপোড়েন। চার মেয়ের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েদের দরিদ্র পরিবারেই বিয়ে হওয়ায় তারাও বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দিতে অক্ষম। আর এ কারণেই জুলহাস শেখ প্রতিদিন সকাল হলে বকুল ফুলের মালা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। প্রতিটি মালা ২০ টাকা করে বিক্রি করে যা লাভ হয় তা দিয়েই বুড়া-বুড়ি কোনোমতে জীবনযাপন করছেন।

পাঁচ সন্তানের জনক জুলহাস শেখ কাজ করে খাবেন, কিন্তু হাত পাতবেন না। ভিক্ষাবৃত্তি তার চরম অপছন্দ। তাই যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে, ততক্ষণ কাজ করেই স্ত্রীকে নিয়ে বাঁচতে চান বলে এ প্রতিবেদককে বলেন।

জুলহাস শেখ আরও জানান, ষাটোর্ধ্ব স্ত্রী বকুল ফুলের মালা গেঁথে দেন, আর তিনি বাজারে কিংবা স্কুল-কলেজের রাস্তায় কখনও বসে, কখনও বা হেঁটে হেঁটে মালাগুলি বিক্রি করেন। যা আয় হয় তা দিয়ে ঠেলেঠুলে দুজনের চলে যাচ্ছে।

তবে আমি চোখে কম দেখি শরীরও দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। চলাফেরা করতে খুব কষ্ট হয়। বৃদ্ধ বয়সেও দুবেলা খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য পথে পথে ঘুরে মালা বিক্রি করি।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক আলাউল হোসেন বলেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থা ও বাস্তবতার নিরিখে প্রবীণ মানেই সব কিছু জানা ও বোঝার পর পরাজিত একজন মানুষ। সময়ের ব্যবধানে প্রবীণ মানুষগুলো অপেক্ষাকৃত অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত। যে বয়সে একটু ভালোবাসা, সান্নিধ্য কিংবা ছেলেমেয়েদের পরম যত্নে থাকার কথা, সেই বয়সে নিগৃহিত হওয়া ছাড়া কিছুই মিলছে না। জুলহাস শেখ যেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তার বিষয়ে উদ্যোগ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন, সম্প্রতি শুনেছি প্রবীণ জুলহাস শেখ বিষয়ে। এতদিন কেন তার কোনো ভাতা হয়নি, সেটাই ভাবার বিষয়। আমি নতুন নির্বাচিত হয়েছি। তার ভাতার ব্যবস্থাসহ পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সবুর আলী বলেন, ইতোমধ্যে ওই প্রবীণ ব্যক্তি সম্পর্কে শুনেছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পাশে দাঁড়াবো। খাবারের ব্যবস্থা, ভাতার ব্যবস্থাসহ তার জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যাতে করে তাকে আর এ বয়সে পথে পথে ঘুরতে না হয়।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বেড়া উপজেলা,ফুল বিক্রি,বয়স্ক ভাতা,জুলহাস শেখ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close