রাজবাড়ী প্রতিনিধি

  ১৩ মে, ২০২২

বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে দিশেহারা রাজবাড়ীর পাটচাষিরা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে কয়েকদিনের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে রাজবাড়ীর বিভিন্ন নিচু এলাকার পাট খেতে ইতোমধ্যেই পানি জমেছে। এর সাথে পাট খেতে বেড়েছে পোকার আক্রমণ। ফলে এবছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাজবাড়ীর পাটচাষিরা।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হলেও এবছর সেই আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে। মূলত পেঁয়াজ, মশুর ও গম উত্তোলন করেই সেই সকল জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। এ জেলায় সব থেকে বেশি পাটের আবাদ হয় বালিয়াকান্দি, পাংশা ও কালুখালি উপজেলায়। সেচের মাধ্যমে এপ্রিল মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পাটের বীজ রোপণ করে কৃষক। তবে এবছর পাট চাষে সমস্যা তৈরি করেছে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও পাট খেতে পোকার আক্রমণ। ঈদের দিন থেকে শুরু করে টানা বৃষ্টিপাত হয় দুই দিন। এর পর তিনদিন কিছুটা বন্ধ থাকলেও ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরেই ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে রাজবাড়ীতে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে অধিকাংশ পাট খেতে পানি জমেছে। এছাড়াও নিচু এলাকার পাট খেত তলিয়ে গিয়েছে। তার উপর আবার পাটের খেতে পোকার সংক্রমণ বেড়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও পোকার আক্রমণে পাটের আবাদ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

কৃষকরা জানান, পাট আবাদের জন্য বৃষ্টির পাশাপাশি নিয়মিত রোদের প্রয়োজন হয়। কোন অবস্থাতেই পাট কেতে পানি জমে থাকা যাবে না। সব সময় জমির মাটি শুকনো থাকলে ফলন ভালো হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ পাট খেতে পানি জমেছে। পানি জমার ফলে ছোট ছোট পাটের মাটির উপরের অংশে শিকর গজিয়েছে। এ জন্য এ সকল গাছ আর বড় হবে না। আবার পানি জমি থেকে সরে গেলে তখন এই পাট রোদে মারা যাবে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে জমিতে আগাছার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাটি নরম থাকায় আগাছাও পরিষ্কার করতে পারছে না কৃষকেরা। বাড়তি উপদ্রব হিসেবে পাট খেতে দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। অনেক খেতে পাটের পাতা খেয়ে সাবার করছে পোকা। তারা বলছেন এবছর পানি জমে থাকা জমিগুলোতে পাট আর বড় হবে না।

পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের কৃষক কার্তিক শীল জানান, পাটের জমিতে সেচ দেবার পরপরই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। তিনদিন বাদ দিয়ে আবার টানা বৃষ্টি চলছে। পাটের বয়স একমাসও হয়নি। পানি জমে থাকায় পাট বড় হবে কিনা সন্দেহ আছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের কৃষক মোহন শেখ বলেন, পেঁয়াজ তুলে আমি পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। তার তিন বিঘাতেই পানি জমে আছে। পানি বের হচ্ছে না। এই পাটও আর হবে না। কেটে ফেলে অন্য কিছুর আবাদ করা লাগবে।

রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বারুগ্রামের কৃষক নজরুল হোসেন বলেন, আমরা বিল এলাকায় পাটের আবাদ করি। কিন্তু এই অসময়ে লাগাতার বৃষ্টিতে পাটের জমিতে পানি। আবার উচু জমির পানি গড়িয়ে নিচে আসছে। ফলে নিচু জমির পাট আর হবে না।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম শহীদ নূর আকবর বলেছেন অন্য কথা। এই কর্মকর্তা জানান, বর্তমান বৃষ্টিপাতের ফলে পাটের ফলন ভালো হবে। পাটের জন্য এই বৃষ্টি দরকার ছিল। পাটের বেড়ে ওঠায় সাহায্য করবে এই বৃষ্টি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাটচাষি,বৃষ্টি,রাজবাড়ী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close