মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ১২ মে, ২০২২

হেলে পড়েছে সোনালি ধান, শ্রমিক সংকটে শঙ্কায় কৃষক

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

গত দুই বছর থেকে চাষীরা ধানের ভাল দাম পেয়েছে। এবছর অনেক আগ্রহ নিয়ে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেছেন চাষীরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় নওগাঁর মাঠে মাঠে ধানের আবাদ ভাল হয়েছে। ফসল দেখে চাষীরা উৎফুল্ল ছিল। কিছুদিনের মধ্যে মাঠের সোনালি ধান গোলায় উঠবে।

গত ১৯ এপ্রিল রাতের কালবৈশাখী তান্ডবে কৃষকদের সোনালি স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এরপর গত দুই দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কৃষকদের সোনালি ধানে শনি হয়ে হানা দিয়েছে। জেলার অধিকাংশ মাঠের আধাপাকা ধান জমিতে শুয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে শ্রমিক সংকটে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায়রও আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর তথ্যমতে, এবার নওগাঁ জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ হেক্টর। কয়েকদিন আগের কালবৈশাখী তান্ডবের পর থেকে কয়েক দফা ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। আধাপাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ধান না পাকায় কাটা-মাড়াই করাও সম্ভব হচ্ছিল না। অনেক জমিতে পানি জমে থাকায় ধান ডুবে রয়েছে। কাটতে দেরি হওয়ায় ধান থেকে চারা গজিয়েছে।

এদিকে, শ্রমিক সংকট হওয়ায় ধান কাটা-মাড়াইয়ে বিলম্ব হচ্ছে। বাড়তি মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। জমিতে হেলেপড়া ধান কাটতে শ্রমিকরা অনীহা প্রকাশ করছেন শ্রমিকরা। জমিতে নুইয়ে পড়া ধানে চিটার পরিমাণও বেশি হচ্ছে। এলাকা ভেদে বিঘাপ্রতি জমির ধান কাটতে ৭-৮ মণ ধান মজুরি হিসেবে দিতে হচ্ছে। আবার বিঘা প্রতি ৫-৭ হাজার টাকায় কাটা-মাড়াই করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভেনলা গ্রামের গ্রামের সন্তোস কুমার বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে কাঁটারি ভোগ জাতের ধানের আবাদ করেছি। গত মাসের ১৯ তারিখের ঝড় আর গত দুই দিন থেকে বৃষ্টির কারণে ধান এখন পানির নিচে। শ্রমিকও পাচ্ছি না যে, একদিনে ধানগুলো কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলব।

আত্রাই উপজেলার ভোপাড়া গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, আমি প্রায় ৮ বিঘা জমিতে বিআর ২৮ জাতের ধান চাষ করেছি। আর ১০-১২ দিন পর ধানগুলো কাটার উপযুক্ত হবে, কিন্তু ঝড় ও বৃষ্টির কারণে বর্তমানে জমিতে ধান নুইয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে পানিতে ধানের শীষগুলো। মহাবিপদে পড়ে গেছি। এভাবে বৃষ্টি আর ঝড় হলে ফলন কমে যাবে। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমত যে, এখনই ধান কেটে নেব।

মান্দা উপজেলার মৈনম গ্রামের কৃষক উজ্বল কুমার বলেন, এত শ্রম দিয়ে ঘাম ঝরিয়ে ধানের আবাদ করে যদি ধান কাটার সময় ঝড়-বৃষ্টি হয় তাহলে তো লাভের চেয়ে লোকশান গুনতে হবে। ৬ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় হাল চাষ খরচ ১,২০০ হাজার টাকা, সেচ খরচ ১,৫০০ টাকা, চারা রোপণ খরচ ১,০০০ টাকা এবং আগাছা দমন ৮০০ টাকা। কীটনাশক ও সার খরচ প্রায় ৫ হাজার টাকা। এছাড়া ধান কাটা-মাড়াই খরচ ৬-৭ হাজার টাকা। সবমিলে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি ইতোমধ্যে ২ বিঘা জমির ধান কেটেছি। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১৬ মণের মতো। বর্তমানে প্রতিমণ ধানের দাম ৮০০-৯০০ টাকার মতো। সে হিসেবে বিঘাপ্রতি ৫-৬ হাজার টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে। ঝড় ও বৃষ্টির কারণে ফলন কম অন্যদিকে উৎপাদন খরচও বেশি। সবমিলে লাভ হবে না।

বিষয়টি নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, জেলার মাঠের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াই হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছি। জেলায় শ্রমিক সংকট এর বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিক সংকটে কৃষকদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে এটা সত্য। আবার ধান কাটার জন্য বাড়তি মজুরিও গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। তবে ঝড়-বৃষ্টি না হলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মাঠের ধান কাটা হয়ে যাবে বলে মনে করছি। বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে। ধান কাটা মাড়াই শেষ না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার বিষয়টি যাচ্ছে না সঠিকভাবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নওগাঁ,প্রাকৃতিক দুর্যোগ,সোনালি ধান,শ্রমিক সংকট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close