গাজী শাহনেওয়াজ

  ১২ মে, ২০২২

ইভিএমে আস্থা অর্জনের পরীক্ষা

আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আস্থা অর্জনের চেষ্টা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন দিয়েই শুরু হবে ইসির এই পরীক্ষা। কারণ এটি কাজী হাবিবুল কমিশনের প্রথম নির্বাচন ও আস্থা ফেরানোর নির্বাচন। তাই ইভিএমে হ্যাক করার সুযোগ নেই ও প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের পৃথক পিন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয় এ ধরনের আস্থামূলক প্রোগ্রাম সেট করে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েও প্রচার চালানোর কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বোপরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কাস্টমাইজ করে ইভিএমে ভোট নেওয়ারও উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে কমিশন।

এদিকে, কুসিক সিটিতে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ফেরাতে কেন্দ্রগুলো থাকবে বিশেষ নজরদারিতে। বসানো হতে পারে কেন্দ্রওয়ারী গোপন ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা)। আর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কোনো প্রার্থী বা তার কোনো কর্মী-সমর্থক তাহলে ইসির মোবাইল টিমের নজরদারিতে এলেই সংশ্লিষ্টরা তাৎক্ষণিক শাস্তি ও জরিমানার মুখোমুখি হবেন। খবর ইসির দায়িত্বশীল সূত্রের।

কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার কুসিক সিটি নিয়ে বৈঠকে বসে কমিশন। সেখানে এ সিটি নির্বাচন আগামী যেকোনো কমিশনের জন্য মডেল নির্বাচন হয়ে থাকবে এমন একটি ভোট আয়োজন করতে দৃঢ় মনোভাব পোষণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেখানে নির্বাচনের পরিবেশ শান্ত রাখতে শোডাউন বন্ধ রাখার বিষয়ে ইতিবাচক নীতি অনুসরণ করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। নির্বাচনী শোডাউনের নামে মোটরসাইকেল শোডাউন করার অপরাধে পৌনে ছয় লাখ টাকা এরই মধ্যে জরিমানা করা হয়েছে।

আজ থেকে মাঠে নামছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের বিষয়ে তদারকি করবেন।

আর আগামী ১৫ মে থেকে মাঠে নামবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নির্বাচনের আগে-পরে মোতায়েন থাকবে র‌্যাবসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনে কোনো অনিয়ম বরদাশত না করার বিষয়ে কমিশনের অবস্থান কঠোর। এরই মধ্যে কুসিক সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসির উপ-সচিব শাহেদুন্নবী চৌধুরী এ সিটি নির্বাচন হবে সর্বজন গ্রহণযোগ্য বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।

এদিকে, ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটের আগে-পরে নজরদারি বাড়াতে গোপন ক্যামেরা (সিসি ক্যাামেরা) বসানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ভোটকেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য নেওয়া হবে বাড়তি নিরাপত্তা।

কমিশন সূত্রমতে, ৩০০ সংসদীয় আসনে ইভিএমে ভোট হবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলীয় সভায় ঘোষণা দেওয়ার পর দেশজুড়ে নতুন করে হইচই শুরু হয়েছে। কিন্তু সিইসি সাফ জানিয়েছে দিয়েছেন, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন অংশীজন ইভিএমের বিষয়ে যে মতামতই দিক না কেন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।

কিন্তু বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলো ছাড়া বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এই প্রযুক্তির বিপক্ষে। এ নিয়ে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিতর্ক থামেনি। মাঝে মাঝে বিতর্ক পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্যের পর সেই ঢেউ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

এরই মধ্যে কুসিক সিটিতে ইভিএমে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এতে নির্ভুল ভোট হয়- বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে বাংলাদেশের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) তৈরি ইভিএম শতভাগ স্বচ্ছ, এ প্রচার চলছে ঢালাওভাবে। এটার গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়াতে এবার কুসিক সিটি নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রওয়ারী ভোটারের তথ্য ইভিএমে সন্নিবেশ করবে ইসি। এখানে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রার্থী চাইলে নিজে কোনো প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে ইভিএমের স্বচ্ছতা পরখ করে নিতে পারবেন।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের উপস্থিতিতে ইভিএমে এলাকাওয়ারী ভোটারের তথ্য সন্নিবেশ করে এই ভোটিং প্রযুক্তি বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে আইন থাকলেও তা প্রয়োগের অভাবে এতে সংকট ঘনীভূত হয়েছে। তাই কাজি হাবিবুল আউয়াল কমিশন আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে এর বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে তৎপর।

ইভিএম আইনের ৩১ অনুচ্ছেদের ধারা ৩(১) উপধারায় বলা আছে, এর অধীন নির্ধারিত সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তাহাদের প্রতিনিধিদের প্রতিটি ধাপে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দালিলিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কমিশন স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়িত হবে; যাতে ইভিএমের কার্যকারিতা ও নির্ভরযোগ্যতার উপর তাদের আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

এ ছাড়া ইভিএমে যে স্বচ্ছ ভোট হয় তা প্রমাণে এর কিছু নিরাপত্তা বৈশিষ্ট তুলে ধরে প্রচার শুরু করতে যাচ্ছে ইসি। এর মধ্যে ইভিএমে ইন্টারনেট সংযোগ নেই বিধায় হ্যাক করা সম্ভব নয়, বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াও ইভিএমের মাধ্যমে ২০ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ভোটগ্রহণ সম্ভব, আঙুলের ছাপ যাচাই করে ভোটার শনাক্ত করা হয় বিধায় একজনের ভোট অন্যজনের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় এবং ইভিএমে ভোটগ্রহণের ফলাফল যেকোনো সময় পুনঃগণনা করা হয়। এসব বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করে কুসিক সিটির মাধ্যমে ইভিএমে আস্থা ফেরানোর চেষ্টায় মরিয়া কমিশন।

ইভিএম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কুমিল্লা সিটিতে গত দুবার ইভিএমে ভোট হয়। সেখানেই ১ হাজার ৩০০ ইভিএম সংরক্ষণ করা আছে। নির্বাচন উপলক্ষে সেগুলোর তথ্য যাচাই করছে ইসি। কিছু ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এসব ইভিএম ঢাকায় ফিরিয়ে এনে ত্রুটিমুক্ত করা হচ্ছে।

ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনে ইভিএম তিন ধাপে যাচাই হয়। প্রথমে ভোটারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, দ্বিতীয় ধাপে মক ভোটিংয়ে এবং তৃতীয় ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতীকের আলোকে। ভোট শুরুর আগে সন্নিবেশিত শূন্য ভোট কাউন্ট আছে তা প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে দেখানো হয়। জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। নতুন করে ম্যানিপুলেট করে তথ্য সংযোজন করে ফলাফল দেওয়ার সুযোগ নেই। আর এবারই প্রথম জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ইভিএম কাস্টমাইজ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইভিএমের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে বলে আমি মনে করি।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইভিএম,নির্বাচন কমিশন,কুসিক নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close