এম কবির, টাঙ্গাইল

  ১১ মে, ২০২২

রঙিন মাছ চাষে জীবন রাঙাচ্ছেন রিফাত

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ।

শখের বসে রঙিন মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রাশেদ শাহরিয়ার রিফাত (২০) নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা। পড়াশোনার পাশাপাশি রঙিন মাছ চাষ করে জীবন রাঙাচ্ছেন তিনি। বাহারি রঙের মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। এই রঙিন মাছ বাসাবাড়ির অ্যাকুরিয়ামে শোভা পেয়ে থাকে। ছোট-বড় এই মাছগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সাড়ে ছয় বছর আগে ছয় হাজার টাকা নিয়ে শখ করে মাছ পালন করেন। আর এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন রঙিন মাছ। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি ক্রয় করেন তার কাছে থেকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্যানেটারীর পাটে লাল, নীল, কমলা, কালো, বাদামি, হলুদ রঙের মাছের ছড়াছড়ি। পানিতে ভাসছে, ডুব দিচ্ছে ছোট-বড় নানা রঙের মাছ। বর্ণিল মাছ দেখলে চোখ জুড়ায়, মন ভরে যায়। প্রায় ২৮ প্রজাতির মাছ রয়েছে তার খামারে।

রাশেদ শাহরিয়ার রিফাত উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামের অ্যাডভোকেট এম এ রশীদের ছেলে। রাশেদ শাহরিয়ার রিফাত টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করেছেন।

রঙিন মাছ চাষ করা রাশেদ শাহরিয়ার রিফাত বলেন, আমি বিগত ২০১৬ সালের প্রথমে রঙিন মাছগুলো ঢাকা থেকে শখের বসে নিয়ে এসেছিলাম। আমার অঞ্চলের কোনো জায়গায় এই মাছ পাইনি। সাড়ে ছয় বছর আগে ছয় হাজার টাকা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। কয়েক মাস চাষ করার পর দেখি মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাছ বৃদ্ধি পাওয়া পর রঙিন মাছ বিক্রির চিন্তা করি। প্রথমে উপজেলার বিভিন্ন দোকানে মাছ বিক্রি শুরু করি। আর এখন জেলার বিভিন্ন উপজেলার দোকান গুলোতে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। এখন প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার রঙিন মাছ বিক্রি করতে পারি। আমার কাছে ২৮ প্রজাতির রঙিন মাছ রয়েছে। প্রতিটি রঙিন মাছ ২০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। সাতটি স্যানেটারী পাটে ও দুইটি হাউজে রঙিন মাছ চাষ করা হচ্ছে। প্রতিটি স্যানেটারী পাটে ১০০০-১২০০ রঙিন মাছ রয়েছে। আর হাউজে রয়েছে বড় রঙিন মাছ। মাছের জন্য দুই বেলা সকাল ও বিকেলে ভাসমান ফিড খাওয়াতে হয়। খাবার বাবদ প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকার খরচ হয়। মাছের ইঞ্চি ধরে এই মাছগুলো বিক্রি করা হয়। এই মাছগুলো এখন দুইটি পুকুরেও চাষ করছি। এ পর্যন্ত আমার সাড়ে ছয় লাখ টাকার মতো লাভ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে অনেকেই অনেক কথা বলেছে। যে এই মাছ চাষ করে কি হবে? দেশি মাছ তো অনেক লাভ। তারপরও আমি এই রঙিন মাছ চাষ করেছি। দেশি মাছ ১ কেজি বিক্রি করে যে পরিমাণ টাকা আয় হয়। রঙিন মাছ এক পলিথিন বিক্রি করে সে পরিমাণ টাকা আয় হয়। আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকার রয়েছে তারা যদি ইচ্ছে করে এই মাছ চাষ করতে পারবে। শিক্ষিতরা এই মাছ চাষ করলে বেশি বুঝতে পারবে। যে কোনো মানুষ যদি রঙিন মাছ চাষ করে তারা কখনও ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। তারা আয়ের মুখ দেখবে।

এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম জানান, রিফাত আমাদের তালিকাভূক্ত একজন মৎস্য চাষি। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রিফাতকে আমরা কারিগরি ও প্রযুক্তিগতভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। তার এই রঙিন মাছের চাষাবাদ আরও বৃদ্ধি করার জন্য আমরা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে তাকে মৎস্য ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। নতুন কোনো উদ্যোক্তারা যদি রঙিন মাছের চাষাবাদ করতে আগ্রহী থাকে তাহলে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রঙিন মাছ,চাষ,জীবন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close