বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার

  ০৯ মে, ২০২২

কক্সবাজারে পর্যটকদের হয়রানি

একশ ৭০ টাকার তেলাপিয়ার বিল ১১০০ টাকা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

কক্সবাজারের লাইভ ফিশ (ইএফসি) রেস্টুরেন্টে (মোটেল শৈবালের পাশে) চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। এই রেস্টুরেন্টের রোষানলে পড়ে প্রতিনিয়ত আর্থিক হয়রানির শিকার হচ্ছে পর্যটকসহ স্থানীয়রা। অন্যান্য রেস্টুরেন্টের তুলনায় খাবারের দাম ৩/৪ গুণ বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিলে মনগড়া টাকার সংখ্যা বসিয়ে অতিরিক্ত অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

বিশেষ করে ঈদের পর থেকে বিপুল পর্যটক আগমনকে কেন্দ্র করে এই রেস্টুরেন্ট গ্রাহকদের পকেট কাটার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে যা দাম নিচ্ছে তা অন্যান্য রেস্টুরেন্টের চেয়ে শুধু অতিরিক্ত বললে ভুল হবে। রীতিমত অস্বাভাবিক বলেও মনে করছেন ভুক্তভোগিরা। অ্যাকোরিয়াম নাম দিয়ে নামমাত্র পানির মধ্যে বিশেষ করে তেলাপিয়া মাছ দেখিয়ে দাম হাতিয়ে নেয়ার কৌশল অবলম্বন করেই চলছে তাদের গলাকাটা বাণিজ্য। লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টের এমন গলাকাটা বাণিজ্যে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। গত ৫ মে তিন পর্যটক বন্ধু খাবার খেতে যান লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টে। ওই সময় রেস্টুরেন্ট বয় তেলাপিয়া ও সরপুটি মাছ দেখান। তারা একটি তেলাপিয়া ও একটি সরপুটি মাছ পছন্দ করে দেন। তাদের অভিযোগ মাছ দেখানোর সময় রেস্টুরেন্ট বয় কোন মাছের দামও বলেনি। কিন্তু খাওয়ার পর বিল দেখে হতবাক হয়ে পড়েন। তাদের অর্ডার মতে, একটি তেলাপিয়া মাছ, একটি সরপুটি মাছ, ৩ প্লেইট ভাত, এক প্লেইট আলু ভর্তা, এক ভাটি ডাল ও একটি পানির বোতল নেন। খাবার শেষে হাতে ধরিয়ে দেয়া বিলে দেখা যায়, একটি ৫৮০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া মাছের দাম নেয়া হয়েছে ৬৩৮ টাকা। অথচ বাজারে ওই সাইজের এক কেজি তেলাপিয়া মাছের দাম ২০০ থেকে ২১০ টাকা। তাছাড়া ৪৪০ গ্রাম ওজনের একটি সরপুটি মাছের দাম ধরা হয়েছে ৬১৬ টাকা। অথচ বাজারে ওই সাইজের এক কেজি সরপুটি মাছের দাম ৪০০ থেকে ৪৩০ টাকা। এছাড়াও ৩ প্লেইট ভাতের দাম নেয়া হয়েছে ২৭০ টাকা, এক প্লেইট আলু ভর্তা ৯০ টাকা, এক প্লেইট ডাল ১৫৫ টাকা এবং এক মিটার পানির বোতলের দাম ধরা হয়েছে ২৫ টাকা। আবার সর্বমোট বিলের সাথে অহেতুক মনগড়া যোগ করে দেয়া হয়েছে ১৭৯ টাকা। এই টাকার কোন প্রকার রেপারেন্সও নেই। সর্বশেষ এই বিল দেখে হতভম্ম হয়ে পর্যটকরা। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ইয়াছিন আরাফাত চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি তাদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পর্যটক মাছের দাম ও ভাতের দামসহ নানা বিষয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদ করলে রেস্টুরেন্ট মালিকসহ ম্যানেজাররা ডিসকাউন্ট দিয়ে বিদায় করার চেষ্টা করেন। এই রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে একই সমস্যায় পড়েন ঢাকা ধানমন্ডি থেকে কক্সবাজার ঘুরতে আসা হিল্লুল চৌধুরী নামের এক পর্যটক দম্পতি। তারাও খাবার শেষে বিল দেখে তেলে বেগুনে জ¦লে ওঠেন।

পর্যটক দম্পতি হিল্লুল চৌধুরী বলেন, রেস্টুরেন্ট এর নামে লাইভ ফিশ মানুষকে আর্থিকভাবে জুলুম করছে। এটি প্রশাসনকে অবশ্যই নজরে নেয়া দরকার। অন্যতায় এভাবে চলতে থাকলে কক্সবাজারের প্রতি পর্যটকেরা বিমুখ হয়ে যাবে। পাশাপাশি লাইভ ফিশের মত গুটি কয়েক জুলুমবাজ ব্যবসায়িদের জন্য বিশে^র মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যটন শহর কক্সবাজারের চরম বদনাম হবে।

এদিকে লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টের পাশবর্তী তেলাপিয়া চাষকারি পুকুরের মালিক জানান, এই রেস্টুরেন্ট তাদের কাছ থেকে পাইকারি দামে তেলাপিয়া মাছ ক্রয় করে ১ কেজি ১৭০ টাকায়। এই তেলাপিয়া মাছ তারা রেস্তেুরেন্টে রান্না করে গ্রাহকদের নিকট বিক্রি করে ১ হাজার ১ শত টাকায়। যা খুবই অস্বাভাবিক বলেও মনে করছেন রেস্টুরেন্টে তেলাপিয়া সরবরাহকারি ব্যবসায়ি।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের ঐতিহ্যবাহি রাধুনি রেস্টুরেন্ট এর মালিক খোরশেদ আলম জানান, ২৫০ কিংবা ৩০০ গ্রাম একটি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১শ’ টাকা। কিন্তু কিছু কিছু রেস্টুরেন্ট লাইভ ফিশ নাম দিয়ে কৌশল অবলম্বন করে গ্রাহকদের কাছে প্রতারণা করে ৭/৮শ’ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। যা খুবই অস্বাভাবিক। লাইভ ফিশের যুক্তি থাকে রান্না করা পর্যন্ত। কারণ রান্নার পর তো কোন কিছুই আর লাইভ থাকেনা। সুতারাং এই প্রতারণা থেকে সকল ব্যবসায়িকে বের হয়ে আসা দরকার।

এসব অভিযোগের বিষয়ে লাইভ ফিশ (ইএফসি) রেস্টুরেন্টেুর মালিক আকতার হোসেন বলেন, আমরা অন্যান্য রেস্টুরেন্ট এর মতো পচা ও বাসি খাবার পরিবেশন করি না। তাই আমাদের খাবারের দাম একটু বেশি। তবে ১৭০ টাকা ক্রয় করা তেলাপিয়া মাছ গ্রাহকদের কাছ থেকে ১ হাজার ১ শ টাকা বিক্রি করার ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি এই রেস্টুরেন্ট মালিক।

কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, কক্সবাজারে ১২০টির অধিক রেস্টুরেন্ট আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত আছে। তন্মধ্যে মোটেল শৈবালস্থ লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট নেই। কারণ তিনি মনগড়া দাম নেয়ার জন্য নিজেকে অনেক বেশি প্রভাবশালী মনে করে। পাশাপাশি নিজেকে বড় আওয়ামী লীগও দাবি করে। পুরো জেলাজুড়ে রান্না করা এক পিস তেলাপিয়া মাছের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর সে বিক্রি করে ৭ শ’ থেকে ৮ শ” টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি সব কিছুই অতিরিক্ত দাম নেয় এই রেস্টুরেন্ট। সুতরাং পর্যটক কিংবা স্থানীয়দের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনকে এই রেস্টুরেন্টের খাবার দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা দরকার। কারণ এই মূহূর্তে তার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের লাগাম টেনে না ধরলে আবারো পুরো দেশজুড়ে কক্সবাজারের বদনাম হবে।

এদিকে উপরোক্ত বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, যদি পর্যটক কিংবা স্থানীয়দের কাছ থেকে কোন রেস্টুরেন্টে মাত্রারিক্ত টাকা আদায় করা হয় প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কক্সবাজার,পর্যটক,তেলাপিয়া,খাবার বিল,লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close