বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দ্রব্যমূল্যের চড়া দামে নাকাল বিরামপুরের নিম্ন আয়ের মানুষ
সকালে ঘুম থেকে উঠে একবাটি মুড়ি বা রাতের বাসিভাত মুখে কাজে বের হন ভ্যানচালক আব্দুল আজিজ (৬২)। ব্যাটারিচালিত ভ্যানে যাত্রী নিয়ে ছুটে চলেন এক সড়ক থেকে আরেক সড়কে। দিন শেষে যা আয় হয় তা নিয়ে সংসারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় শাকসবজি, তেল ও চাল কিনতে গেলে বিপাকে পড়েন তিনি। দিনের শুরুতে বাজার তালিকায় থাকা সব পণ্য কেনা হয়না তার। বাজার ব্যাগের ভেতরের অনেকটা জায়গা খালি রেখেই বাড়িতে ফিরেন তিনি। বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বিড়বিড় করে বলেন, বাজারে এক্কেবারে আগুন নাগিছে!
দৃশ্যটি, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা কাটলা, বিনাইল ও জোতবানী ইউনিয়নের দাউদপুর, দামোদরপুর, চৌঘুরিয়া, খিয়ারমামুদপুর, জোতবানী, শিবপুর, চাকুল, অচিন্তপুর, বানোড়া ও দেশমা গ্রামগুলোর নিম্ন আয়ের মানুষদের। এসব চলছে গত কয়েক মাস ধরে। বাজারে গিয়ে জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে বিপাকে পড়া আব্দুল আজিজ এর মত আরও রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
উপজেলার সীমান্তঘেঁষা খিয়ারমামুদপুর গ্রামের ভ্যানচালক আবুল হোসেন (৬৫), উত্তর দাউদপুর গ্রামের রিফাজ উদ্দিন (৫৫), ইদ্রিস আলী (৫১), গোলাম মোস্তফা গোলাপ (৪৫), হারুনুর রশিদ (৫১), দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের সামসুল ইসলাম (৩৭), শৈলান গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৫৩) ও কেটরা বাজারের সুজন আলী (৩৭) তাদের মধ্যে অন্যমত। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের যারা দৈনিক কায়িক পরিশ্রম করে হাজিরা খাটেন তাদের অবস্থা আরও করুণ।
উপজেলার উত্তর কাটলা গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৫৫)। তিনি ২৬ বছর ধরে ভ্যান চালান। আর্থিক দৈন্যতায় পুরাতন ভ্যানে এখন নতুন ব্যাটারি লাগাতে পারেননি।
তিনি বলেন, সংসার চালাতে গিয়ে ঋণের বোঝা এখন মাথার উপর চেপে আছে। ভ্যান চালিয়ে দিনে আড়াই’শ থেকে ৩শ টাকা আয় হয়। সন্ধ্যায় বাজারে গেলে জিনিসপত্রে চড়া দাম শুনে অনেক সময় খালি ব্যাগ হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।
উপজেলার বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গত ৭ দিনে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায় যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৩৫ টাকা কেজির বেগুন এখন ৪০ টাকা, ২০ টাকার টমেটো ৩০ টাকা কেজি, ৩০ টাকার খিরা ৪০ টাকা, ৩০ টাকার কাঁচামরিচ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির মত চালের বাজারেও এ চড়া বাতাস লেগেছে। কাটলা হাট-বাজার বণিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সামসুল মিয়া বলেন, গত সপ্তাহে ১৫৮ টাকায় বিক্রি হওয়া খোলা সয়াবিন তেল এখন কেজি প্রতি ১৭০ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল ৩ টাকা বেড়ে এখন লিটার প্রতি ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া স্বর্না-৫, মিনিকেট, নাজিরশাইল ও ইন্ডিয়ান ৪০/৯৪ চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা করে বেড়েছে।
উপজেলার সীমান্তবর্তী বাজারগুলোতে এখন চলছে শাকসবজি, তেল ও চালের চড়াদামের প্রতিযোগিতা। এক বাজারের দ্রব্যমূল্যের সাথে আরেক বাজার চিত্র সম্পূর্ণই আলাদা। বিক্রেতারা যে যার মত করে ব্যবসা করছে। যার প্রভাব পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনে। যদিও এসব এলাকায় শাকসবজির প্রচুর পরিমাণে আবাদ হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে টানাবৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে সবজির আবাদ নষ্ট হওয়ায় বাজারে শাক-সবজির দাম বেড়েছে। তবে এলাকার সচেতনমহল দাবি করছেন, এক ধরনের অসাধু সিন্ডিকেডের কারণে পণ্যের বাজার লাগামহীন। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষরা দিন শেষে চাল-ডাল কিনে ক্লান্ত দেহে হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, উপজেলায় কোনো অবৈধ মজুদদার খাদ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করছেন। বিরামপুর পৌরশহরে চারজন ওএমএস ডিলার প্রতিদিন ৪টি স্পটে ওএমএসের পণ্য বিক্রি করছেন। সেখান থেকে নিম্ন আয়ের মানুষরা অনায়াসেই সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন। এরপরও যদি কোথাও খাদ্যপণ্যের অবৈধ মজুদ বা বাজার সিন্ডিকেটের কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।