রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
রাণীনগরে চার পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ
নওগাঁর রাণীনগরে জায়গা-জমির মালিকানা বিরোধের জের ধরে চারটি পরিবারকে সাত মাস ধরে একঘরে রাখার অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া ইটের প্রাচির দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে চলাচলের রাস্তা। এঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেও গত তিন মাসে প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন। উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের বড়খোল গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য বড়খোল গ্রামের আকবর দেওয়ানের ছেলে ছামছুর দেওয়ানসহ পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, বড়খোল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে ছামছুর দেওয়ান পরিবারের জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গ্রামের মাতাব্বর প্রধান এবং প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন জায়গা ছেড়ে দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে পার্শ্বে খাস জমিতে বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব নাকচ করার কারণে গত সাত মাস আগে গ্রামের মাতাব্বর আব্দুল করিম, রিয়াজুল ইসলাম, বেলাল ও প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনসহ লোকজন নিয়ে ছামছুর দেওয়ানের পরিবারের সদস্য মোমেনা বিবির ঢোক দোকান ঘর ভেঙে দেয়।
এরপর মাতাব্বররা ছামছুর দেওয়ান, ভাই উজ্জল দেওয়ান, শরিকান রমজান দেওয়ান এবং মোমেনা বিবিসহ চার পরিবারকে একঘরে করে রাখে। এরপর আমরা জায়গার মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা দিয়েছি।
ছামছুর দেওয়ান আরো জানান, মাতাব্বর রিয়াজ দেওয়ান নিজে এসে ছামছুর দেওয়ানসহ চার পরিবারের লোকজনকে এক ঘরে করে রাখার বিষয়টি জানায়। এছাড়া সমাজের কোন লোকজন ওই চার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে, ছামছুর দেওয়ানের ভ্যানগাড়িতে যাতায়াত করতে, দোকান থেকে কোন জিনিস ক্রয় করতে এবং মসজিদে নামাজ পরতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। নির্দেশনা ভঙ্গ করলে তার এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলেও তারা ঘোষণা দেয়।
এমন নির্দেশনার পর থেকে গ্রামের কোন লোকজন তাদের সাথে কথা বলেনা এবং দোকান থেকে কোন জিনিসপত্র বা ওষুধও বিক্রি করেনা এবং ভ্যানগাড়িতেও কেউ যাতায়াত করেনা। এছাড়া বিদ্যালয়ের জায়গা দাবি করে ছামছুর দেওয়ানসহ চার পরিবারের লোকজনের চলা-চলের রাস্তা ইটের প্রাচির দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে করে বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে প্রাচির টপকে। ফলে ২১জন সদস্য নিয়ে চরম দুর্ভোগে পরেছে ওই চার পরিবার।
ওই গ্রামের শাহিন হোসেন, ইকবাল হোসেন, খায়রুল ইসলাম প্রামানিক জানান, স্কুলের সাথে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছে। কয়েকবার বসেও সমাধান হয়নি তাই মাতাব্বরদের নির্দেশে সমাজ থেকে তাদেরকে একঘরে করে রেখেছে। যে কারণে আমরাও কথা বলি না।
এ ঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে ছামছুর দেওয়ান নওগাঁ জেলা প্রসাশক বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে গত ২৭ অক্টোবর ২০২১ জেলা প্রসাশক রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে “ব্যক্তিগতভাবে দেখে অবহিত” করার নির্দেশ দেন। এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল তদন্ত করে আসলে গত তিন মাসেও কোন সুষ্ঠু প্রতিকার মেলেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
গ্রামের প্রধান মাতাব্বর আব্দুল করিম, রিয়াজ উদ্দীন এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন একঘরে করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ছামছুর দেওয়ানরা খারাপ মানুষ। যে কারণে গ্রামের কোন লোকজন ওদের সাথে কথা বলেনা। এছাড়া ওরা নিজেরায় নিজেদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করেছে। আমরা তাদেরকে বন্ধ করিনি।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, জেলা প্রসাশকের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি এবং উভয় পক্ষকে আমার দপ্তরে ডেকেছি। আসা করছি তারা আসবেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে।