মো. আবু সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা)

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২২

আশ্রয়নের ৫৫০ ঘর এখন পরিত্যক্ত, লতাপাতা আগাছায় ভরা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বরগুনার আমতলী উপজেলায় আশ্রয়নের ৫৫টি ব্যারাকের ৫৫০টি ঘর সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত হওয়ায় লতাপাতা আর আগাছায় ভরে গেছে। ঘরের দরজা, জানালা এবং চালার টিনগুলো মরিচা ধরে খসে পড়েছে। ঘরে মানুষ না থাকার সুযোগে অনেক জায়গায় দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে লাখ লাখ টাকা মূল্যের টিন লোহার এঙ্গেল খুলে নিয়ে গেছে। এগুলোর সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ বসবাসরতদের।

জানা গেছে, নদীভাঙনে গৃহহারা ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর আবাসনের জন্য ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ও নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় এসব ঘর। ১৯৯৬ সালে এই প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আশ্রয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর জাপান সরকারের সহায়তায় নির্মাণ করা হয় ব্যারাক হাউস নামে আরেকটি প্রকল্প।

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, আমতলী উপজেলায় ৮টি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫৫টি ব্যারাকে ৫৫০টি ঘর রয়েছে। দীর্ঘদিন এসব ঘর সংস্কার না করায় বর্তমানে মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

অধিকাংশ ঘরে এখন আর কোনো পরিবার বসবাস করে না। গুলিশাখালীর কালিবাড়ী ১০টি ও হলদিয়া ইউনিয়নের সেনের হাটের পূর্বপাশে নির্মিত ঘরে ২০টি পরিবারসহ মোট ৩০টি পরিবার থাকার কথা, কিন্তু এখন সেখানে কেউ নেই। ব্যারাক দুটি খালি পড়ে আছে।

কালিবাড়ি আশ্রয়নের ঘরের বেড়ার টিন সব খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। আঠারগাছিয়া ইউপির গোলবুনিয়া গ্রামের স্লুইজ গেট সংলগ্ন আশ্রয়নের ১০টি ঘরের অবস্থা। এখানে ১০ টি পরিবারের থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১টি পরিবার। স্থানীয় চোরেরা এখানকার দরজা-জানালা এবং চালার টিন খুলে নিয়ে যাওয়ায় এখন সেখানে ফাঁকা স্ট্রাকচার পড়ে আছে।

একই অবস্থা আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের মধ্য যুগিয়া ৪টি ব্যারাক হাউজের ৪০ ঘরে এখন আর কেউ বসবাস করে না। সেখানের দরজা-জানালা-টিন সব চুরি হয়ে গেছে। একই অবস্থা আমতলী সদর ইউনিয়নের চারঘাট, গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া এবং হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়নের ঘরের। কালিবাড়ি এবং দক্ষিণ পশ্চিম আমতলীর গোলবুনিয়া আশ্রয়নে ঘুরে দেখা গেছে, ঘরের কিছুই নেই। ফাঁকা পড়ে আছে বেড়াবিহীন ঘরগুলো।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়নের ঘর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখানের অবস্থাও ভয়াবহ। ১৫টি ব্যারাকে ১৫০টি পরিবারের বসবাসের কথা। আছে মাত্র হাতেগোনা ১০-১১ টি পরিবার। ভয়াবহ কষ্টের কারণে তারাও চলে যেতে পারে যেকোনো সময়। এখানের ১০ টি ব্যারাকের কোনো ঘরের চালার টিন নেই।

যা আছে তাও ফুটো হয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি ঝরে। রোদের সময় আবার টিনের ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো ঘরে ঢুকে। নির্মাণের পর সংস্কার না করায়, দরজা-জানালা খুলে পড়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরের টিন মরিচা ধরে পড়ে যাওয়ায় লোহার স্ট্রাকচারগুলো কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার উপর গুল্মলতা আর বুনো ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে।

এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এসব ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ঘর মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ফলে কয়েক বছর যেতে না-যেতেই ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে বৃষ্টির পানি পড়তে শুরু করে। ঘরের মেঝেতে ফাটল ধরে। ফলে বেশির ভাগ ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়নে বসবাস রত মুনছুরা বেগম বলেন, ঘরের টিনের চাল সব ফুটা অইয়া গগ্যাছে। দেওই অইলে পানি পড়ে আর রোদ অইলে ফুটা দিয়া ঘরের মধ্যে রোদ ঢুইক্যা যায়। মোরা হেইয়ার লাইগ্যা এহন এই ঘরে ঠিকমতো থাকতে পারি না, ঘুমাইতে পারি না।

তক্তাবুনিয়া আশ্রয়নে বসবাসরত সুলতানা বেগম বলেন, ঘরের অবস্থা এতই খারাপ স্যার মোরা এহন আর এই ঘরে থাকতে পারি না। চাল দিয়া দেওইর সময় খালি পানি পরে। হেইয়ার লইগ্যা না হইল পাতা আর পলিথিন দিয়া এহন ঘরে থাকতে হয়।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়নের সভাপতি সুলতান মৃধা বলেন, আশ্রয়নের ঘড় এহন ছাড়া বাড়ি অইয়া গ্যাছে। ঘরের টিন লোহা খুডি সব নষ্ট অইয়া যাওয়ায় সব মানুষ ছাইর‌্যা চইল্যা গ্যাছে। মানুষ না থাহায় আশপাশে ঝোপ-জঙ্গল অইয়া ভইর‌্যা গ্যাছে।

আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, নির্মাণের পর আশ্রয়নের ঘর সংস্কার করা হয়নি। এসব ঘর সংস্কারের অভাবে আশ্রয়নে বসবাসকারী পরিবারগুলো থাকতে পারছেন না। এগুলো দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন।

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো.মফিজুর রহমান বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্কারের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। ঊর্ধ্ব কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়া গেলে এবং বরাদ্দ পাওয়া গেলে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে বলেন, ঘরগুলো সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আমতলী,বরগুনা,আশ্রয়ন প্রকল্প,লতাপাতা,আগাছা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close