ইদ্রিস আলী, চৌহালী (সিরাজগঞ্জ)

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২২

যেদিকে চোখ যায় শুধু পাকা হলুদের সমারোহ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

সরিষা চাষের শুরুতে যখন সরিষা ফুল আসতে শুরু করেছে ঠিক তখনই ৩-৪ দিনের টানা বৃষ্টি আর ঘনকুয়াশায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল , কিন্তু শত বাধা উপেক্ষা করে কৃষকরা বুকভরা আশা নিয়ে এ বছর আবাদ করেছেন সরিষা। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার প্রতিটি মাঠেই এ চিত্র চোখে পড়ে। যেদিকে দু'চোখ যায় শুধু পাকা হলুদের সমারোহ। এবার কৃষকরা সরিষার আবাদ করেছেন প্রাণ খুলে। অল্পদিনের আবাদে কৃষকদের বেশি একটা খরচ হয় না বলে তারা সরিষার আবাদ করে থাকেন। আমন ধান উঠার পর পর কৃষকরা জমি চাষ করেন অথবা অনেকেই ধানের জমিতে চাষ ছাড়াই ছড়িয়ে দেন সরিষার বীজ।

সরেজমিনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় উপজেলার উত্তর খাষকাউলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল ছাত্তারের সঙ্গে। গত বছর ৪ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলেন তিনি। ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর প্রায় ৬ বিঘা জমিতে তিনি সরিষার আবাদ করেছেন। পরিপক্ব হয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে প্রতিটি সরিষার চারা। কোনো কোনো জমি থেকে গাছ উঠাতেও শুরু করেছে ৷ যদি আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশ পাওয়া যায় তবে নিজ নিজ চাহিদা মেটানোর পর বাজারেও বিক্রি করতে পারবেন তারা।

পশ্চিম খাষকাউলিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, আমি চরে ১২ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। যখন ফুল আসে তখন ৩-৪ দিন বৃষ্টি হয়েছিল তার ওপর ঘন কুয়াশাও রয়েছে ৷ চিন্তা করছিলাম সব শেষে ফসল ঘরে তুলতে পারব কি না, কিন্তু আল্লাহর মর্জিতে অনেক ভালো হয়েছে ৷

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলা ৭টি ইউনিয়নে ২ হাজার ২শ ২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৯৪ হেক্টর। এর মধ্যে দেশি জাত ও উচ্চফলনশীল বারি সরিষা-১৪, ৮৩০ হেক্টর, বারি সরিষা-১৫, ২১০ হেক্টর, বারি সরিষা-১৮, ০৫ হেক্টর, টরি সরিষা- ৭, ১ হাজার ১১০ হেক্টর ও রাই -৫, ৭০ হেক্টর জাতের সরিষার আবাদ করেছে কৃষকরা যা গত বছরের চেয়ে ১৫ হেক্টর বেশি। ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড শীত থাকলেও সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ১.৪ মে. টন ৷ এছাড়া এখানকার মাটি সরিষা আবাদের জন্য বেশ উপযোগী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরিষা চাষীদের যথাযথ পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন মাঠে থেকে ।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জেরিন আহমেদ জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ১১ শ' কৃষকের মাঝে কৃষি উপকরণ, উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বীজ ও রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল। এ বছর উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১৯.২০ হেক্টর, সরিষা চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২৩০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ২ হাজার ২২৫, যা গত বছরের তুলনায় ১৫ হেক্টর বেশি। তিনি আরও জানান, এ বছর ৭টি ইউনিয়নে ২ হাজার ২৩২.৫ মে. টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা রাখছি। ইতোমধ্যে অর্ধেকেরই বেশি সরিষা উঠানো হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী সাপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি উঠানো হবে। কৃষি বিভাগ থেকে সর্বক্ষণ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,চৌহালী,হলুদের সমারোহ,সরিষা চাষ,বাম্পার ফলন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close