ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২১ জানুয়ারি, ২০২২

ছাতক সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম!

সুনামগঞ্জের ছাতক সরকারি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্টতা লংঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাতক ডিগ্রি কলেজ ২০১৮ সালে সরকারিকরণ করা হয়। সরকারি নিয়মেই এ কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষক কর্মচারীরা বেতন-ভাতা ভোগ করে আসছেন। কলেজটি সরকারিকরণ হয়ার পর এটি মাউশির নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে।

কলেজের অধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমদ অবসর গ্রহণের পর ২০১৯ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন মোঃ আব্দুস সাত্তার। গত ১২ জানুয়ারি তিনিও অবসর গ্রহণ করেছেন। এ সময় নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (হিসাব বিজ্ঞান) মোঃ বেলাল আহমেদকে। এতে জ্যেষ্ঠতা লংঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কলেজের একাধিক শিক্ষক। অধ্যাপকদের মধ্যে একটি অংশে এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, ১৬ নভেম্বর কলেজের সহকারী অধ্যাপক তুলসী চরন দাস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদের জন্য আবেদন করেন। মোঃ বেলাল আহমেদ ও এ পদে আবেদন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান আবেদন দু’টি মাউশি সিলেট অঞ্চলে যথা নিয়মে প্রেরণ করেন।

চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সিলেট থেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি চিঠি দেয়া হয়। এই চিঠিতে অধ্যক্ষ নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার বিষয়, তথ্য ও জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১৩ ধারা উল্লেখ করে বিধি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে বলা হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান শিক্ষাবোর্ড'র চিঠি কলেজে পাঠিয়ে দেন। এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১৩ ধারায় উল্লেখ রয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতা ও অভিজ্ঞতা তাদের সংশ্লিষ্ট পদে প্রথম এমপিও ভুক্তির তারিখ থেকেই গনণা করতে হবে। কোন ক্ষেত্রে এমপিও ভুক্তির তারিখ এক হলে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের তারিখ বিবেচনা হবে। তবে কোন শিক্ষকের নিয়োগ নিয়মিতকরণ করা হলে নিয়মিত করণের তারিখ যোগদানের তারিখ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এদিকে যোগদানের তারিখ ও এক হলে জন্ম তারিখ বিবেচনায় জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করতে হবে। এখানে তুলসী চরণ দাস ১৯৯৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথম এমপিও ভুক্ত হন। আর মোঃ বেলাল আহমদ এমপিও ভুক্ত হন ২০০০ সালের প্রথম আগস্টে। এ অবস্থায় মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি'র) নিয়ম বহির্ভূতভাবে অধ্যাপক মোঃ বেলাল আহমেদকে কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট ও ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে এক স্বারকলিপি দেন তুলসী চরন দাস। এতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে মোঃ বেলাল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তুলসী চরন দাসের নিয়োগই অবৈধ। কলেজের সব নথিতে অধক্ষ্যের পরে জ্যেষ্ঠ হিসেবে তার নাম রয়েছে।

অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস সাত্তার (বিদায়ী) জানান, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মোঃ বেলাল আহমেদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি।

মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সিলেটের পরিচালক প্রফেসর আবদুল মান্নান খান জানান, ছাতক সরকারি কলেজে যিনি নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানান নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত তার জানা নেই। কোনো অনিয়ম হলে বিস্তারিত জানার পর তা ঢাকায় প্রেরণ করা হবে।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রহমান জানান, মাউশি থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এই নির্দেশনা তিনি কলেজে পাঠিয়েছেন। এর কোন রিপ্লাই এখনো তিনি পাননি। জবাব পেলে যদি দেখা যায়, এতে অনিয়ম হয়েছে তবে এর কোন কার্যক্রম গ্রহণযোগ্য হবেনা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ছাতক সরকারি কলেজ,অধ্যক্ষ নিয়োগ,অনিয়ম
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close