মো. আবু সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা)

  ২১ জানুয়ারি, ২০২২

যৌবন হারাচ্ছে আমতলীর বাঁশবুনিয়া নদী

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বরগুনার আমতলীর বাঁশবুনিয়া নদীতে পানি না থাকায় তলদেশে ধান চাষ করা হচ্ছে

উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন ঘেঁষে নিরন্তর বয়ে চলা বাঁশবুনিয়া নদী ক্রমশই যৌবন হারাচ্ছে। সময়ের বির্বতনে দখল-দূষণের কবলে পড়ে এক সময়ের খরস্রোতা এই নদীটি এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। চৈত্র মাস আসার আগেই প্রমত্তা বাঁশবুনিয়া তাঁর জৌলুস যৌবন হারিয়ে পানি শূন্যতায় ভূগছে। আমতলী সদর ইউনিয়নের টিয়াখালী হলদিয়া ইউনিয়নের সুবান্ধী পর্যন্ত দীর্ঘ এই নদীটি তাঁর ঐতিহ্য হারিয়ে মৃত্যুপ্রান্তে উপনীত। একটি নদীর জন্য যতটুকু পানিপ্রবাহ থাকার প্রয়োজন তা নেই বললেই চলে। যতটুকু পানি আছে তা দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি প্রাচীন খড়স্রোতা নদী। অথচ বেশি দিন আগের কথা নয় যখন নদীর বুক জুড়ে নিরন্তর বয়ে চলতো ছল ছল পানি। আর জেলেদের কর্মব্যস্ত দেখা যেত মাছ শিকারে। নদীতে গুণটানা নৌকা চলতে দেখা যেত। বাঁশবুনিয়া অবাহিকায় এই নদীপথেই বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ নৌকা পথে শহরে আসত, কিন্তু সময়ের বির্বতনে ঐতিহ্যবাহী করতোয়া নদী পানি শূন্য হয়ে পড়ায় এর বুকজুড়ে জেগে উঠে ধু ধু বালুচর।

আর এ সুযোগে জমির মালিকরা ধান, সরিষাসহ নানা ফসল চাষ করতে থাকে। বর্ষা মওসুমে শুধু নদীটি পানিতে টইটুম্বুর হয়ে তাঁর ভরা যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসার আগেই শুকিয়ে মৃত্যু নদীতে পরিণত হয়।

বর্তমানে নদীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকাই শুকিয়ে গেছে। সামান্য একটু অংশজুড়ে হাঁটু পানি আছে। নদীর এমন গতিপথ ও পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় আমতলীর অর্থনীতিতেও বিরুপ প্রভাব পড়েছে। একদিকে যেমন জেলেরা মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তেমনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম মন্দা যাচ্ছে।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বজ্রা নৌকায় ধান, পাট, সরিষাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল আনা নেওয়া করা হতো। নদীর বুকজুড়ে বারো মাস পানি থাকত। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে দেখা যেত। আর পানি ভেতরে শুশুক মাঝে মধ্যেই ঝাপুড়ি দিয়ে লাফিয়ে বেড়াত। পালতোলা ও গুণটানা নৌকা হরহামেশাই দেখা মিলত। হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া. ধানখালী, নলুয়াবগী ইউনিয়নের মানুষ বাঁশবুনিয়া নদীপথেই উপজেলা শহরের সাথে যোগাযোগ মালামাল আনা নেওয়া করত, কিন্তু নদীটির এই দুরবস্থার কারণে এসব ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ এখন চরম বিঘ্নিত হচ্ছে।

নদীটি নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি নদীতীরে শত শত ঘরবাড়ি গড়ে উঠায় মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। নদীতে গোসল করে নানা রকম চর্মরোগে ভুগছেন নদীতীরের শত শত মানুষ।

হলদিয়া ইউনিয়নের প্রবীণ ব্যক্তি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, এই নদী দিয়ে আমরা আমতলী পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন নৌকা-লঞ্চযোগে আসা যাওয়া করতাম। নাব্যতা সংকট ও দখলের কারণে এখন নদীপথে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে।

হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাব।

আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, সরোজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আমতলী,বরগুনা,বাঁশবুনিয়া নদী,বালুচর,নাব্যসংকট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close