এস.এইচ.এম তরিকুল, রাজশাহী

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

জটিলতা ও সমন্বয়হীনতায় ‘করোনা ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল!

ফাইল ছবি

রাজশাহীর সদর হাসপাতালকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ শয্যা ও ১৫ আইসিইউ সংবলিত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুতে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। যে কাজটি শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া ছিল গত বছরের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত।

কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে আরও দুমাস অতিবাহিত হলেও শেষ হচ্ছেনা সংস্কার কাজ। তবে এর কারণ হিসেবে প্রশাসনিক নানা জটিলতা ও সমন্বয়হীনতার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ সুযোগে ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্কারকাজে অংশ নেওয়া প্রতিটি বিভাগেই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ব্যাপক চাপ তৈরি হলে রাজশাহী সদর হাসপাতালকে ‘করোনা ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে যথা সময়ে সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার সর্তে এ কাজে তত্বাবধায়নকারী একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সমন্বয় ও সিদ্ধান্তহীনতায় কারণে আমরা সংস্কার কাজই এখনো পুরোপুরো শেষ করতে পারছিনা।

গত কয়েক মাস থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় সংস্কার কাজে ধীরগতির কথা বলা হয়। তাহলে কাজের অগ্রগতির কী হবে এমন সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে স্যাররা জানিয়েছিলেন অপেক্ষা করুন। এ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে, না কী সদর হাসপাতাল আগের কার্যক্রম চালু করবে তা নিয়ে কথা চালাচালি চলছে? এর মধ্যে আবার অনেকেই মতামত দিয়েছেন আগের মত ডেন্টাল ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। তাই এক কথায় বলতে গেলে এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এতদিন টানাপোড়ন চলছিল। তবে সম্প্রতি ওমিক্রনের বিষয় মাথায় এসেছে। যে কারণে আমাদেরকে আবারও সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এমন সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে এই সংস্কার কাজে ব্যাপক অর্থ লোটাপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক ও দেখভালের দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা।

তারা বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেকও কাজ করা হয়নি। প্রতিটি কাজেই অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। অন্যদিকে সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত না হওয়ার অজুহাতে স্বাভাবিক হচ্ছে না রামেক হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের রোগীরা।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুতিতে প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন গত বছরের ৪ জুলাই। পরবর্তীতে রাজশাহী সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে সংস্কার কাজ শুরু হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয় নি। এছাড়া নির্ধারিত ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে কী না ? এ বিষয়েও নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে চলমান কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা অস্বিকার করে সদর হাসপাতালের সংস্কার কাজে দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এখানে দুইটা টেন্ডার ছিলো। একটা সিভিল অংশে এবং আরেকটা মেডিকেলের গ্যাস অংশের। সিভিল অংশের কাজ শেষ হয়ে গেছে। তবে গ্যাসের অংশটার জন্য সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই সকল বেডে গ্যাসের লাইন টানা শেষ হয়েছে। আশা করছি, চলতি জানুয়ারির মধ্যেই বুঝিয়ে দিতে পারবো।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার ও রাজশাহী ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রাজিউল হক বলেন, সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পর প্রয়োজনীয় উপকরণ পেলেই সদর হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে। রামেক হাসপাতালের করোনা রোগীর ব্যবস্থাপনার যে সক্ষমতা আছে তার বেশি রোগী হলে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালে করোনার রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে অন্যান্য সাধারণ রোগীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এখনো পোহাচ্ছে। বার্ন ইউনিটে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে দুইবছরের অধিক সময় ধরে মাত্র ১৪টা বেড নিয়ে বার্ন ইউনিটকে দ্বিগুনেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এখানকার রোগীরা বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও দুর্ভোগ রয়েছে। তবে সদর হাসপাতাল ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত হলেই সেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা হাসপাতাল থেকে দেয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জটিলতা,সমন্বয়হীনতা,রাজশাহী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close