সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আধুনিক চাষাবাদের বিস্তারে হারিয়ে যাচ্ছে আখ চাষ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

আধুনিক চাষাবাদের বিস্তারে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদের একসময়ের জনপ্রিয় কৃষি আখ চাষ। ১০-১৫ বছর আগেও আখ চাষের বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। শীতের সকালে গ্রামে গ্রামে ঘুরে আখের রস বিক্রি করতেন রস ফেরিওয়ালারা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও আখের রস খাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠতেন। এসব যেন এখন শুধুই স্মৃতি। কালের বিবর্তনে তা যেন এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

একসময় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রচুর আখ চাষ হতো। নদীর চড়, হাওড় ও সমতল ভূমিতে প্রচুর আখ চাষ করতেন কৃষকরা। গ্রামে গ্রামে গরু-মহিষ দিয়ে চড়কির মাধ্যমে আখের রস সংগ্রহ করা হতো। আধুনিক চাষাবাদের বিস্তারে কৃষকরা সহজলব্য ফসল উৎপাদনে মনোনিবেশ করেছেন। এতে আখ চাষের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর ইউনিয়নের নিকটবর্তী কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বিলেরপাড় গ্রামে দেখা মিলে মেশিন দিয়ে আখের রস সংগ্রহের দৃশ্য। গ্রামীণ জনপদের একসময়ের জনপ্রিয় কৃষি আখ চাষ এখনও ধরে রেখেছেন কৃষক হারুন মিয়া। তিনি মেশিন দিয়ে আখ থেকে রস সংগ্রহ করে তা আগুনে জ্বাল দিয়ে লালী ও গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন।

উপজেলার ভানুগাছ বাজার থেকে রস, লালী, গুড় নিতে আসা সজিব দেবরায় জানান, এই রস লালী, গুড় এগুলো এখন আর গ্রামে নিয়ে কেউ যায় না। এগুলো এখন বিলুপ্তের পথে। আমরা সাধারণত বাজারগুলো থেকে গুড় কিনে খাই। আসলে সেটা কতটুকু স্বাস্থের জন্য ভালো তা জানি না।

তিনি আরো বলেন, আমি ফেইসবুকে দেখতে পাই, এ এলাকায় এই ধরনের চাষ ও বিক্রি হচ্ছে। তাই ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসে রস, লালী ও গুড় নিতে আসলাম। তারা আমার কাছ থেকে রসের দাম রাখল কেজিপ্রতি ২০ টাকা, লালী কেজিপ্রতি ১০০ টাকা ও গুড় ১৫০ টাকা। আসলে দাম কেমন তা দেখে কিনতে আসিনি। মূলত এগুলো একদম ফ্রেশ তাই পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছি। সামনে পৌষ সংক্রান্তি উৎসব। সেই উৎসবে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানিয়ে খাব।

কৃষক হারুন মিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গত ২-৩ বছর ধরে আখ চাষ করে আসছি। সাড়ে তিন কিয়ার (১০৫) শতক জায়গায় আমি নিজে এই আখ ক্ষেতের চাষ করি। আমার খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। আমার এই খরচের টাকার পরেও দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হবে।

তিনি আরো বলেন, আমি অন্যের কাছ থেকে আরো ৩ কিয়ার (৯০) শতক জায়গার আখ কিনেছি। সব মিলিয়ে খরচের পর চার লাখ টাকা আয় হবে।

তিনি আরো জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আসছেন আমার এই কৃষি ক্ষেতে আখ মাড়াই করে রস, লালী ও গুড় তৈরি করা দেখতে ও নিয়ে যাইতে। আমি রস ২০ টাকা, লালী ১০০টাকা গুড় ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমলগঞ্জ,আধুনিক চাষাবাদ,আখ চাষ,জনপ্রিয় কৃষি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close