নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনায় ধলাই নদীর মরণ দশা
নেত্রকোনা পৌরসভার মঈনপুর এলাকায় ধলাই নদী অবস্থিত। এক সময় এই নদী উত্তাল ছিল। এই নদীতে চলতো নৌকা, লঞ্চ। এখন দূষণে-দখলে মরণ দশা এই নদীর।
নদী পাড়ের এক কৃষক জানান, তিনি মাছ ধরতে পছন্দ করতেন। বড় বড় আইর মাছ, বাইম মাছ ধরতাম নদীতে। নৌকায় ধান, পাট নিয়ে বিক্রি করতাম বাজারে। আর এখন এই নদী মরার পথে।
শুধু এই কৃষকই নন, ধলাই নদীর মরণ দশা নিয়ে এমন আক্ষেপ নদীর দুই পাড়ের আরও অনেক কৃষক কৃষানির।
তারা জানান, এই নদীটি পূর্বধলা উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকা দিয়ে ঢুকে সদর উপজেলার লালবুড়িয়া বিল হয়ে হাটখলা, মাহমুদপুর, কুনিয়া, উলুয়াটি, কয়রাটি, মনকান্দিয়া, বড়শিকুড়া, সাতপাই, মঈনপুর, চকপাড়া, রাজুরবাজার ও দেয়ালিয়া বিলের ওপর দিয়ে হরিখালি এলাকায় মগড়া নদীতে মিশেছে। একসময় এ নদীর উত্তাল তরঙ্গ ভরা যৌবন ছিল। নদীর বুক চিরে চলত পাল তোলা নৌকা।
তারা আরও জানান, এই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল নেত্রকোনা শহর। প্রসার ঘটেছিল জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ও সভ্যতা। নৌকায় লোকজন যাতায়াতসহ কৃষকের উৎপাদিত পণ্যও বিক্রির জন্য বড় মোকামে নিয়ে যেত এই নদী পথে। দুই পাড়ের বাসিন্দাদের গোসল, দৈন্দিন গৃহস্থালির কাজ চলতো এই নদীর পানি দিয়ে। কালের আবর্তে দখলে-দূষণে এই ধলাই নদী আজ মৃত প্রায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নেত্রকোনা শহরের উত্তর পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরে অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গায় গড়ে উঠছে বাসাবাড়িসহ নানা স্থাপনা। মইনপুর, চকপাড়া এলাকায় বাসাবাড়ির পয়ঃনিস্কাশনের শতাধিক পাইপ নদীতে দেওয়া। ময়লা আর কচুরিপানায় ভরা নদী। রাজুরবাজার এলাকায় নদীর তলায় জমে থাকা পানি ময়লা আবর্জনায় নীল হয়ে গেছে। দূষণ আর দখলের কারণে নদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।
মঈনপুর এলাকার এক গৃহিনী বলেন, আমরা অপারগ হয়ে এই পানি ব্যবহার করি। গোসলের পর শরীর চুলকায়। পোলাপানের অসুখ বিসুখ ছাড়েনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, ধলাই নদী খননের জন্য দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রাক্কলন তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হলে জানুয়ারি মাসে খনন কাজ শুরু করা যাবে।
নদীটি খনন করলে শহরের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।