কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ০১ জানুয়ারি, ২০২২

নির্বাচনী মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

৫ম ধাপে আগামী ৫ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ পর্যায়ে এসে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের প্রচারণার মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন উপজেলাবাসী।

নির্বাচনী প্রচারণায় মানা হচ্ছে না কোন আচরণবিধি। প্রতিদিন আচরণবিদি লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত মাইক দিয়ে প্রার্থীদের প্রচার চালানো হচ্ছে। মাগরিব ও এশার নামাজের সময়ও বন্ধ থাকে না মাইকের প্রচারণা। ফলে নামাজীদের সাথে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা হার্ট, কান ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

দুপুর দুইটার পরেই মাইকে শুরু হয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা। চলে টানা রাত ৮টা পর্যন্ত। চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের নানা গুণগান সমৃদ্ধ স্লোগান প্রচার করা হয় মাইকে। কেউ নিজের কণ্ঠেই বলে যাচ্ছেন, কেউ আবার রেকর্ড করা স্লোগান ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে এক রকমের অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার এলাকাবাসী। আগামী ৫ জানুয়ারি এ ইউনিয়নে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ২০ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয় প্রচারণা। ঠিক দুপুর ২ টার সময় থেকেই প্রার্থীদের সর্মথকেরা মাইকে প্রচারণার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীদের একই সড়কে অটোরিকশায় ৭-৮টি প্রচারণার মাইক চলে। জনসাধারণকে শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে ওই সময়টুকু দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরতে দেখা গেছে। শহরের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পথচারীরাও উচ্চ শব্দের যন্ত্রণা ভোগ করছেন। বাসা বাড়িতেও শিশু ও বয়স্কদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাইকের উচ্চ শব্দ।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৫ম ধাপে আগামী ৫ জানুয়ারি কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৩, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০৬ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩২৭ জনসহ মোট ৪৬৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।

উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে প্রার্থীদের নানা প্রচারণা চালানো হয়। ফলে রাস্তার পাশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, অফিস, ব্যাংক ও দাপ্তরিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

উপজেলার ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, প্রতিদিন প্রধান সড়ক দিয়ে ৭-৮টি মাইক উচ্চ শব্দে প্রচারণা চালায়। অনেক আবার গান বাজিয়ে প্রার্থীদের নানা স্লোগান দেন। দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মারাত্মক যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। কাউকে বলেও লাভ নেই, এ বিষয়ে কেউই গুরুত্ব দিচ্ছে না।

হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা মোশারেফ হোসেন বলেন, প্রার্থীদের প্রচার মাইক হাসপাতালের সামনে দিয়ে গেলেও থামে না। শব্দ দূষণে আমরাই অতিষ্ঠ, রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

শমশেরনগর হাজী উস্তার বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্রী কানিজ ফাতেমা জানায়, মাইকের উচ্চ শব্দের কারণে পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে। দুপুরের পর থেকে শব্দে কান ফেটে যায়।

একাধিক প্রার্থী জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ জন সদস্য প্রার্থী ও দুই থেকে পাঁচ জন মেয়র প্রার্থীর প্রচারণা চলছে। কম করে হলেও সাতটি মাইক বিভিন্ন সড়কে প্রচার করছে। শব্দ নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বলা হলেও যিনি মাইকিংয়ের দায়িত্বে থাকেন, তার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে কতটুকু শব্দ ব্যবহার করা হবে। তবে নিয়ন্ত্রিত শব্দ দিয়ে প্রচারণা চালানোর কথা জানিয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নীতিমালার চেয়েও প্রার্থীদের কাছে ভোটারের পছন্দ অপছন্দ বিবেচনা করতে হবে। উচ্চ শব্দ সবার জন্যই ক্ষতিকর। আমাদের ভ্রাম্যমাণ টিম রয়েছে মাঠে, তারা প্রয়োজনে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এলাকাবাসী,মাইকের উচ্চ শব্দ,নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close