জহিরুল ইসলাম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)

  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

মাথা গোঁজার ঠাঁই চান প্রধানমন্ত্রীর আদর্শ গ্রামের বাসিন্দারা

২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী কুয়াকাটার ভাসমান জেলেদের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে সাগর পাড়ে উপহার দিয়েছিলেন আদর্শ গ্রাম। প্রায় ৫০টি পরিবারের সুখ-দুঃখের ঠিকানা ছিল এটি। কিন্তু ১৫ নভেম্বর ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় গ্রামটি।

স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, সিডর-পরবর্তী সময়ে মানবিক সহায়তা দানকারী সংস্থা রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হয় কুয়াকাটার বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু তারা পুনার্বাসিত ঘর ফেলে রেখে বসবাস করেন সাগর পাড়ে। সরেজমিনে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষোভের সাথে নানান অভিযোগ তোলেন আদর্শ গ্রামের বাসিন্দারা।

এ গ্রামের বাসিন্দা মোসলেম আকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের অসহায় দেখে ২০০১ সালে কুয়াকাটায় সরকারি এক নম্বর খাস খতিয়ানে ৫১৭৮ দাগে বেড়িবাঁধের ঘরকুলে জায়গা দিয়েছিলেন স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য। কিন্তু তখনকার এ অঞ্চলের ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা আমাদের সরলতা পেয়ে সাগর পাড়ে ঝুঁকির মধ্যে বাস করার ব্যবস্থা করে দেন। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে আমাদের সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দেয়। সিডর-পরবর্তীতে রেডক্রিসেন্ট যে ঘর করে দিয়েছে, তা আমাদের ইনকামের একমাত্র উৎস মাছ ধরার স্থান থেকে অনেক দূরে। আসা-যাওয়ায় প্রায় ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়। আমরা সাগরে কোনদিন মাছ পাই আবার কোনদিন পাই না। স্ত্রী-সন্তান নিয়া দুইবেলা খেয়ে যাতে বাঁচতে পারি সেইজন্য রেডক্রিসেন্টের ঘর ফেলে সাগর পাড়ে থাকি।

আদর্শগ্রামের আরেক বাসিন্দা বাবুল পহলান বলেন, রেড ক্রিসেন্ট থেকে যে ঘর পেয়েছি, তা বসবাস করার মতো না। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার কোন সুযোগ নাই। অসুস্থ হলে হাসপাতাল নিয়া যাওয়ার রাস্তা নাই। আমাদের কর্মস্থল অনেক দূরে হওয়ায় বাড়িঘর ছেড়ে মানবেতরভাবে বেঢ়িবাঁধের পাশে থাকতে বাধ্য হয়েছি।

মো. মোজাম্বেল বলেন, যখন আদর্শ গ্রামের ঘরগুলো আমাদের দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকে ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছিলাম। সাগর সে সময় থেকেই ভাঙতে শুরু করেছিল। প্রভাবশালীরা আমাদের তখন প্রতিবাদ করার সুযোগ দেয়নি। এখন আবার শুনতেছি, এখানেও থাকা যাবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আদর্শ গ্রামের বাসিন্দারা মাথা গোঁজার স্থান চাই।

২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকা ইউপি চেয়ারম্যান বারেক মোল্লার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, সে সময়ে আদর্শ গ্রাম যেখানে দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে সাগর প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল। গ্রামটি যে এভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, তা সবার কল্পনাতিত ছিল।

উল্লেখ্য, বর্তমানে কুয়াকাটা বেড়িবাঁধের উন্নয়ন কাজের জন্য আশপাশে বসবাসকারী সবাইকে দ্রুত সরে যেতে বলা হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আদর্শ গ্রাম,কুয়াকাটা,সাগর পাড়ের মানুষ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close