কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

ঘটনা তদন্তে পুলিশের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

দলবদ্ধ ধর্ষণ-হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচার দাবি

কুষ্টিয়া মিরপুর বর্ডার গার্ড স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে ফাতেমাকে(১৪) অপহরণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণপূর্বক হত্যার ঘটনাটি কেবলমাত্র হত্যা মামলা হিসেবে এবং এজাহারে বাদীর দেওয়া আসামিদের নাম বাদ দিয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করার প্রতিবাদসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

রবিবার (২১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত উম্মে ফাতেমার পিতা মিরপুর পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ড ওয়াপদা সড়কের বাসিন্দা খন্দকার হামিদুর রহমানের ছেলে খন্দকার সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ইসলামের অভিযোগ, “একমাত্র কন্যা মিরপুর বর্ডার গার্ড স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে ফাতেমাকে (১৪) অপহরণ ও গ্যাং রেপসহ নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের বিবরনসহ জড়িতদের নাম উল্লেখ করে মামলা দিতে চাইলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি।

তদন্তকারী পুলিশের এমন রহস্যজনক ভুমিকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘চলতি বছর ১৩ জুলাই গভীর রাতে নিজ বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে ফাতেমাকে অপহরণ করে সংঘবদ্ধ আসামিরা। পরদিন উপজেলার ভাঙা বটতলা এলাকায় একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে ফাতেমার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ১৪ জুলাই উম্মে ফাতেমাকে অপহরণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষনসহ নির্মম নির্যাতনে সমস্ত শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত, গলায় ফাঁস ও বিভিন্ন অঙ্গে দাহ্য পদার্থ দ্বারা ঝলসে দিয়ে হত্যায় জড়িত সন্দেহে ৪-৫ জনের নাম উল্লেখসহ অভিযোগ এনে লিখিত এজাহারে মামলা করতে মিরপুর থানায় যাই। কিন্তু পুলিশ তা আমলে না নিয়ে পুলিশের লেখা একটা এজাহারে চাপ প্রয়োগ করে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করেন পুলিশ।

সাইফুলের অভিযোগ, ‘আমার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এই মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে মিরপুর পৌর এলাকার কুরিপোল মধ্যপাড়ার বাসিন্দা মিলন হোসেনের ছেলে আমলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আপনকে(২০) গ্রেপ্তার করে ঘটনার মোটিভ উদ্ধার করেছে দাবি করে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খায়রুল আলম সাংবাদিক সম্মেলন করে গণমাধ্যমে তুলে ধরেন।

এ সময়েও আমি পুলিশকে বলেছি, এতোবড় ঘটনা একমাত্র আসামি আপনের পক্ষে ঘটানো অসম্ভব। অথচ আমার কোন আর্তনাদ-হাহাকারকে গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। পুলিশের এমন রহস্যজনক ভুমিকার কারণে আমি বাধ্য হয়েই মেয়ে হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য ডিআইজি খুলনা, আইজি ঢাকা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিত আবেদন করেছি।”

এদিকে, স্কুলছাত্রী উম্মে ফাতেমার লাশের সুরতহাল রিপোর্ট এবং সর্বশেষ গত ৯নভেম্বর আদালতে দাখিলকৃত ময়না তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে- উম্মে ফাতেমার মৃত্যু হয়েছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্নসহ হত্যাকান্ড পূর্ব সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ময়না তদন্ত সম্পন্নকারী চিকিৎসক ডা. সুতপা রায়।

তবে, সাংবাদিক সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খাইরুল আলম দাবি করেন, “এখানে মামলার তদন্ত ঠিকমতোই চলছে”। “এখানে মেডিকেল সার্টিফিকেটে ডাক্তার তো একটা অনুমান নির্ভর রিপোর্ট দিয়েছে যে এখানে গ্যাং রেফ হয়েছে, কিন্তু আমরা ডিএনএ টেষ্টের রেজাল্ট পেলেই বুঝতে পারবো এখানে ঘটনার সাথে কার কার নমুনা পাওয়া গেছে তার উপর ভিত্তি করেই পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে”।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দলবদ্ধ ধর্ষণ,হত্যায় জড়িত
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close