গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

চলনবিলে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী তারা

চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, সিংড়া, লালপুর, নলডাঙ্গায় বাণিজ্যিক ভাবে শত শত হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারের আয়ে উপজেলার বহু মানুষের ভাগ্য বদলেগেছে। হাঁসপালনে খামারিদের সুদিন ফিরায় এই পেশায় নামছেন আরও অনেকেই।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চলনবিলের গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও নলডাঙ্গা বিলের বিভিন্ন স্থানে খামার রয়েছে। কেউ কেউ জালের ঘের তৈরি করে হাঁস পালন করছেন। ভোর বেলাতেই খামারি এবং এর সাথে যুক্ত মানুষ হাঁস নিয়ে অথৈ বিলে যান। সন্ধায় আবার হাঁস নিয়ে খামারে ফিরে আসেন।

স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি তালিকাভুক্ত ছাড়াও কয়েকশ হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে ১০ লাখেরও বেশি হাঁস রয়েছে। হাঁসপালনে এই অঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষের বেকারত্ব ঘুঁচেছে। বেড়েছে আয়।

গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা গ্রামের সামাদ আলী জানান, শতাধিক ক্যাম্বেল হাঁস পালন করছেন। সকালে হাঁসগুলো পাশেই বিলে সারাদিন খায়। সন্ধ্যায় বাড়িতে নিয়ে কিছু খাবার দেন।

খুবজিপুর ইউনিয়নের জামাল উদ্দিন জানান, তিনি ২৫-৩০টি হাঁস পালন করেন। সকালে হাঁসগুলো পাশের পুকুরে চলে যায়। সারাদিন পুকুরের শামুক-ঝিনুক খায়। তিনি নিজেও কিছু খাবার দেন। পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ ছাড়াও হাঁস বিক্রি করে আয় হয় তার।

সিংড়া উপজেলার নিংগইন এলাকার খামারি সোহাগ জানান, তিনি সারা বছরই হাঁস পালন করেন। এখন তার খামারে ক্যাম্বেল ও জিংডিং জাতের ৫৮২টি হাঁস রয়েছে। ৪-৫ মাস বয়সী হাঁস কেনেন সোহাগ। সাড়ে ৫ মাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে। এখন তার খামারের ৪৮০টি হাঁস ডিম দিচ্ছে। বছরে খরচ বাদে ৩-৪ লাখ টাকা লাভ থাকে।

আরেক খামারি আফজাল ও আব্দুর রহিম জানান, এক দিনের বাচ্চা কিনে ডিম উপযোগী করতে পাঁচশ হাঁসে খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকা। তবে ডিম দেওয়া শুরু করলে খরচ নিয়ে ভাবনা থাকে না।

নাটোর প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে- শুধু চলনবিলেই খামারের তালিকাভুক্ত রয়েছে ৪৫১টি হাঁসের খামার। প্রতিটি খামারে হাঁস রয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার। এ ছাড়াও তালিকার বাইরেও পারিবারিক পর্যায়ে শত শত খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বেকারত্ব থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

পরিসংখ্যান বলছে- খামার পর্যায়ে রাজহাঁস পালন হচ্ছে ৩৮ হাজার ৫৫০টি। এ ছাড়া পাতিহাঁস ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯২টি। বর্ষার শুরুতে খাদ্য কম লাগায় এক দিনের বাচ্চা থেকেই এসব হাঁস পালন শুরু করেন খামারিরা। ৬ মাস পর থেকে এসব হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। এতে খামারিরা খরচ বাদে প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি আয় হয়। বছরে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় করে থাকেন।

নাটোর প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, চলনবিলের গুরুদাসপুরে ৭০টি, সিংড়ায় ১৫০টি, নলডাঙ্গায় ৫৬টি, বড়াইগ্রামে ৬০টি, বাগাতিপাড়ায় ৬০টি ও লালপুরে রয়েছে ৫৫টি হাঁসের খামার রয়েছে। চলনবিলের আবহাওয়া অনুযায়ী তিন জাতের হাঁস বেশি পালন করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পালন হয় ক্যামবেল জাতের হাঁস। এছাড়া ইন্ডিয়ান রানার ও চায়না জাতের হাঁসও পালন করছেন খামারিরা।

তিনি আরও বলেন, হাঁসপালনে খামারিদের সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে হাঁসের খামারের সংখ্যা। বাণিজ্যিক খামার পর্যায় ছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার হাঁস পালনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এসব খামারে রয়েছে ৭ থেকে ৮ লাখ হাঁস। প্রতিটি পরিবার ব্যক্তিগত খামার থেকে ভালো আয় করছেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বাবলম্বী,হাঁসপালন,চলনবিল
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close