মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

কাঠের চাকায় ঘোরেনা মজিদের জীবনের চাকা 

সভ্যতার অগ্রগতিতে চাকা আবিষ্কারের পর জীবনের গতি বেড়েই চলেছে। তবে প্রথমে কে, কোথায় চাকা আবিষ্কার করেছেন এর কোন দলিল না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয় যিশু খ্রিষ্টের জন্মের পাঁচ হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন মেসোপটেমিসায় প্রথম চাকা আবিষ্কৃত হয়।

খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার দুইশত অব্দের দিকে মিশরে যান্ত্রিক কাজে চাকার ব্যবহার শুরু হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে স্কটিশ আবিষ্কারক জন ডানলপ ১৮৮৮ সালে মোটর গাড়িতে ব্যবহারোপযোগী চাকা আবিষ্কার করেন। যার ফলে রেলগাড়ি, বিমান, ওয়াগন, মোটরগাড়ি, গরু-মহিষের গাড়ি, সাইকেল, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে চাকার ব্যবহার হচ্ছে।

তারই ধারাবাহিকতায় নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজকে সহজতর করতে গ্রামীণ জনপদের শুরু হয় গরু-মহিষ কিংবা ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার। কৃষি কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতাযাতের সকল মাধ্যম ছিলো কাঠের চাকা বিশিষ্ট এই সব গাড়িগুলো। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ার বিকল্প, অধিক শক্তি সম্বলিত দ্রুত গতির যানবাহনের অবির্ভাব ঘটেছে। ফলে বিলপ্তির পথে গরু-মহিষ কিংবা ঘোড়ার গাড়ি। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাগের চাকা ঘুরছে না এসব গাড়ির চালক ও গাড়িতে ব্যবহৃত চাকা তৈরির কারিগরদের।

১৯৪০ সালে রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জের গরুর গাড়ি তৈরির কারিগর আ. মজিদ নামের এক যুবক ঝিনাইদহের মহেশপুরে আসেন। তিনিই সর্বপ্রথম মহেশপুর শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে সড়কের পাশে পড়ে থাকা জায়গায় একটি কাঠের চাকা ও গরুর গাড়ি তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন। এরপর আ. মজিদের দেখাদেখি একই এলাকা হতে অনেকেই এসে একই পেশায় কাজ শুরু করেন। মহেশপুর উপজেলা জুড়ে প্রায় ৫০টিরও অধিক জায়গায় এই কারখানা ছিলো।

কিন্তু দীর্ঘদিনের সেই পেশার এখন আর ভাগ্যের চাকা ঘুরে না তাদের। বাধ্য হয়ে অনেকে পাল্টিয়ে ফেলেছেন তাদের বাপ-দাদার পেশা। আবার অনেকে চলে গেছেন তাদের নিজ জন্ম ভূমি চাপাইনবাবগঞ্জে।

কালক্রমে দেশের শহর থেকে গ্রাম বিদ্যূতায়িত হয়েছে। গ্রামের পানি-কাদার রাস্তাগুলো হয়ে ওঠেছে পিচঢালা সড়ক। সড়কগুলোতে নামতে থাকে স্থানীয়ভাবে তৈরি নসিমন, করিমন, ভটভটি, লাটাহাম্পার ও স্টিয়ারিং নামের ইঞ্জিনচালিত নানা বাহন। এসব শক্তিশালী যানবাহনের দাপটে আজ সড়কে আর দেখা মেলে না গরু-মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া চাকা তৈরির কারিগর আব্দুল মজিদ এখন বৃদ্ধ। এই পেশায় জীবনের স্বচ্ছলতা না আসলেও অকৃতিম ভালোবাসায় ছাড়তে পারেননি এই পেশা। দুই-একটা কাজ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই ছেলে-মেয়ে নিয়ে থেকে গেছেন মহেশপুরে।

তিনি বলেন, এটা আমার বাপ-দাদার পেশা। এক সময় গাড়ির চাকা তৈরির প্রচুর চাপ ছিল। তবে এখন আর কোন চাহিদা নেই বললেই চলে। তবুও এই পেশাকে ভালবেসে পড়ে আছি মহেশপুরে। এই পেশা ছেড়ে যেতে মন চায় না। দু-একটি চাকা তৈরির অর্ডার পাই। এতেই কোনরকম টিকে আছি।

আর এভাবেই নিজ পেশাকে ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে জীবনের শেষ দিন পার করতে চান তিনি।

মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। তাই পূর্বে সকল কাজে এ গাড়ির কোন বিকল্প ছিলনা। কিন্তু এখন গরু-মহিষের গাড়িগুলো আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। তবে এটা আমাদের ঐহিত্য। এটাকে টিকিয়ে রাখা দরকার।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কাঠের চাকা,ঝিনাইদহ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close