reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ নভেম্বর, ২০২১

ছোট্ট খাঁচায় শিলার পৃথিবী!

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

খাঁচা কথাটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের মনে ভেসে উঠে বনের পশুপাখি বা চিড়িয়াখানার জীবজন্তু। কিন্তু মানবশিশুর জন্য খাঁচাকে বন্দিশালা হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। সত্যি তাই। জন্মের ৩ বছর বয়স থেকে খাঁচারূপী বন্দিদশায় দিনরাত কাটে ছোট শিলার। তার বয়স এখন ৯ বছর। শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এই খাঁচাই এখন তার পৃথিবী।

রাজবাড়ির কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ি ইউনিয়নের পূর্বফুল কাউন্নার গ্রামের মদম কুমার দাস ও চন্দনা রানীর মেয়ে এই শিলা। তিন বছর বয়সে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পেরে তখন থেকেই তাকে খাঁচাবন্দি করে রাখা হয়।

পরিবারসূত্রে জানা যায়, শিলারা তিন ভাই-বোন। তার মধ্যে শিলা মেজ। তার বড় ভাই স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর ছোট ভাইয়ের বয়স দুই বছর। বাবা একটি সেলুনে কাজ করেন। সেই টাকা দিয়েই মেয়েকে চিকিৎসার জন্য একাধিকবার ভারতে নিয়ে গেছেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি। মানুষজনকে কামড়ে ও আঁচড়ে দেওয়ায় বারান্দায় একটি খাঁচা তৈরি করে শিলাকে সেখানে আটকে রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, তাদের বাড়িটি টিনের, মেঝে মাটির। ঘরের সামনে মাটির বারান্দার এক কোনে মোটা জাল দিয়ে ঘিরে রাখা খাঁচায় শিলার বাস। খাঁচার পাশেই রান্নাঘরে মা কাজের পাশাপাশি মেয়ের দেখভাল করেন।

ওই শিশুর মা চন্দনা জানান, অনেক কবিরাজ, ডাক্তার দেখিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। জমানো টাকা, জমিজমা বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম। টাকার অভাবে সেখানে চিকিৎসা করাতে পারলাম না। এখন দেশে চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন ১৫০ টাকার ওষুধ লাগে। মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা লাগে। এমতাবস্থায় ওর চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

এ বিষয়ে এলাকার প্রতিবেশীরা জানান, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই শিশুটিকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের দুঃখের শেষ নেই। দরিদ্র বাবা-মার সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। তার ওপর মেয়েটির চিকিৎসা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ সময় সরকারসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।

কাজী শরীফুল ইসলাম নামে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান জানান, আমি শিশুটিকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছিলাম। যেখাবে ৬ মাস পর পর সে ২১০০ টাকা করে পায়, কিন্তু সামান্য টাকা দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা ব্যক্তিগতভাবে তাকে যতটুকু পারছি সহযোগিতা করছি।

জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, খাঁচার মধ্যে আটকে রাখার বিষয়টি অমানবিক। এতে তার মস্তিষ্কে বড় ধরনের ইফেক্ট পড়বে। সমাজসেবার অধীনে এ ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তাকে সেখানে রাখা যেতে পারে। শিশুটির যেহেতু মস্তিষ্কে সমস্যা সেহেতু তাকে একটি নিউরোসার্জনের অধীনে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইসমাইল হোসেন জানান, সরকারিভাবে বা সমাজসেবায় এ রকম প্রতিবন্ধী শিশুদের রাখার ব্যবস্থা নেই কালুখালীতে। শিশুটি বাবা-মা ছাড়া থাকতে পারে না। এজন্য এই শিশুটিকে দূরে কোথাও রাখা যাচ্ছে না। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে প্রতিবন্ধীদের সহায়তা দিয়ে আসছি। তাকেও সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজবাড়ী,খাঁচাবন্দী,শিলা,ছোট্ট শিশু,কালুখালী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close