ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

  ১৯ নভেম্বর, ২০২১

বিয়ে নাটক করে কিশোরীকে ধর্ষণের পর ৭ দিনের মাথায় তালাক

ফাইল ছবি

ঢাকার ধামরাইয়ে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে মামলা থেকে বাঁচতে বিয়ে নাটক করে ৭ দিনের মাথায় ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে তালাকনামা দিতে এসে আটক হয়েছেন অভিযুক্ত মোঃ সেলিম হোসেন নামে বখাটের মামা। এসময় তার সঙ্গে ঐ এলাকার বর্তমান মেম্বার ও মেম্বার প্রার্থীসহ আরও ৪ জনকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দিয়েছেন গাংগুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মোল্লা।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বিকাল ৪ টার দিকে উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুননালাই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলাকালে ভুক্তভোগীর বাড়ির সবাই ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যান। এ সুযোগে বাড়িতে একা পেয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের ধূল্লা গ্রামের আব্দুল লতিফের বখাটে ছেলে সেলিম হোসেন সদলবলে ওই কিশোরীকে অপহরণ করে।

এরপর সাটুরিয়ার কলাসুর এলাকার একটি নির্জনস্থানে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরে অপহরণকারী তাকে ফেলে পালাতে গেলে ধর্ষিতার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ওই অভিযুক্তকে আটক করেন।

অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে কলাসুর ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ রোবেল হোসেন ও মেম্বারপ্রার্থী মোঃ আব্দুল গফুরের পরামর্শে এবং তাদের সার্বিক সহায়তায় মানিকগঞ্জ নোটরী পাবলিক আদালতে অ্যাফিডেভিট করে বিবাহ সম্পন্ন করে। এর ৭ দিন যেতে না যেতেই খোলাতালাক সম্পাদন দেখিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টার দিকে অপহরণকারী সেলিম হোসেনের মামা মোঃ খুরশেদ আলম, বর্তমান ইউপি মেম্বার মোঃ রোবেল হোসেন, মেম্বার প্রার্থী মোঃ আব্দুল গফুর, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নয়া মিয়া ও মতাব্বর মোঃ আসলাম হোসেনসহ পাঁচজন ওই কিশোরীর বাড়ি আসেন।

এসময় পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হয় ওই কিশোরীকে না পেয়ে। তাদের ধারণা, মেয়েকে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এখন বাঁচার জন্য তারা এ পথ অবলম্বন করেছে। কিশোরীর মা তার মেয়ের কথা জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে প্রতিবেশীরা এসে ঘেরাও করে তাদেরকে আটক করেন। খবর পেয়ে গাঙ্গুটিয়া ইউপি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কাদের মোল্লা ঘটনাস্থলে এসে মুচলে রেখে ইউপি মেম্বার মোঃ রোবেল হোসেন, মেম্বার প্রার্থী মোঃ আব্দুল গফুর, আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ নয়ামিয়া ও মাতাব্বর মোঃ আসলাম হোসেনকে ছেড়ে দেন। পরে কৌশলে মাতাব্বরা সেলিমের মামা খোরশেদ আলমকে কিশোরীর বাড়িতে রেখে চলে যান। এই সময় তাকেও ছেড়ে দিতে ওই ইউপি চেয়ারম্যান গ্রামবাসীকে চাপ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

এব্যাপারে আটক খুরশেদ আলম জানান, আমরা ওই মেয়েটিকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে না দিয়ে তাদেরকে তালাকনামা দিতে আসায় তাদের সন্দেহ হলে আমাদেরকে আটক করেন। আমার সঙ্গে আসা লোকজন তারা পালিয়ে গেছেন। এখন তারা বলছেন, তাদের মেয়েকে তাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আমাকে চলে যেতে। এখন আমি মহা বিপাকে পড়ে গেছি। আমার এলাকার কেউ এব্যাপারে আমাকে কোন সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছে না।

ওই কিশোরীর মা শাহানাজ বেগম বলেন, আমার মেয়েকে আমাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আটক ব্যক্তি চলে যাক। আমার মেয়েকে হয়তো তারা মেরে ফেলেছে ! তাই বাঁচার জন্য এ পথ অবলম্বন করেছে তারা। নইলে মেম্বার মাতাব্বরসহ ওই ৪ জন পালাবে কেন? তাদের মনে এত ভয় কিসের?

এব্যাপারে গাঙ্গুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তার সমাধানও আছে। তাই বলে তাদেরকে আটকে রাখতে হবে নাকি। তারাতো আমাদেররই প্রতিবেশী পার্শ্ববর্তী থানা এলাকার মানুষ। তারা পালিয়ে কোথায় যাবে। আর তাই মুচলেকা রেখে তাদের ছেড়ে দিয়েছি।

এ ব্যাপারে কাওয়ালীপাড়া বাজার পুলিশতদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ রাসেল মোল্লা বলেন, আমাদের কাছে কেউ এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি। সাংবাদিকদের মুখেই ঘটনাটি প্রথম শুনলাম। এব্যাপারে অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানিকগঞ্জ,সাটুরিয়া,কিশোরী অপহরণ,ধর্ষণ,মেম্বার আটক
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close