ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

  ২৮ অক্টোবর, ২০২১

ধামরাইয়ে সহিংসতার মধ্য দিয়ে শুরু হল নির্বাচনী প্রচার  

ধামরাইয়ে নির্বাচনী সহিংসতা

ঢাকার ধামরাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রথম দিনেই চার ইউনিয়নে গুলি, মারধর পোস্টার ছেড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে প্রচার প্রচারণা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন ক্ষমতাসীন দলের নৌকার মনোনীত প্রার্থীরা।

বুধবার দুপুরের দিকে প্রতীক বরাদ্দের পর রাতে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে রোয়াইল ইউনিয়নে। বালিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কর্মীদের ওপর হামলা হয়। দুটি গাড়ি ভাঙচুর এবং একজনের হাত ভেঙে দেওয়া হয়। সোমভাগ ইউনিয়নে মারধরের শিকার হন স্বয়ং স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৪জন। গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে পোস্টার লাগাতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন আরেকজন।

রোয়াইল ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টু বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমি নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে ছিলাম। এসময় হঠাৎ করে প্রায় ১০০-১৫০ মোটরসাইকেলে করে প্রায় দুইশ জনের মতো লোক লাঠির মাথায় নৌকার ছবি টাঙিয়ে আমার অফিসের সামনে মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ওরা চাচ্ছিলো আমরা যেনো প্রতিবাদ করি আর সংঘর্ষ বেধে যায়। কিন্তু আমরা পুরো সময় অফিসে বসে ছিলাম। তখন আমি বিষয়টি ওসি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করি। তারা আমাকে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। আমি আগামীকাল অভিযোগ দেবো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রোয়াইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন খান বলেন, আজকে কি হয়েছে আমি জানি না। তিনি (স্বতন্ত্র প্রার্থী) সবসময় মিথ্যা অভিযোগ করেন। এর আগেও এমন অভিযোগ করেছিলো।

সোমভাগে হামলায় আহত হওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যার দিকে বানেশ্বর পশ্চিম পাড়া মসজিদে নামাজ শেষে বেরিয়ে দেখি আজাহার আলীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে যাচ্ছে। পরে আমি আমার সমর্থকদের বলি ওই মিছিল চলে গেলে আমরা বের হবো। এসময় ওই মিছিল থেকে উসকানিমূলক কথা বলা হলে আমাদের এক সমর্থক সেটি ভিডিও করতে উদ্যত হয়। সেটি দেখে আজাহারের সমর্থকরা সেই ফোন ছিনিয়ে নেয়।এই বিষয় নিয়েই বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আমাকে আমার ছোট ভাই বাবুকে, সাইফুল সুরুজসহ তিন-চারজনকে মারধর করা হয়। পরে আমিসহ সবাইকে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হতে হয়।

তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজাহার আলী ঘটনা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মারামারির ঘটনা ঘটছে। তারা আমার অফিস ভাঙচুর করেছে। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিতে আসছি।

এদিকে বালিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকি নান্নুর এক সমর্থকের হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বিকেলে একটি ভ্যানে মাইক নিয়ে আমার চার কর্মী প্রচারণা চালিয়ে বালিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়ার দিকে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে সামনে থেকে আসা প্রায় ৪০-৫০টা মোটরসাইকেলের লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। তারা সবাই নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমানের রাজীব সজীব এর প্রচারণা করেন।

তিনি বলেন, তারা রড লাঠিসোটা নিয়ে আমার চারজন কর্মীকে বেধরক মারধর করতে থাকেন। এসময় স্থানীয় লোকজন ছুটে আসলে তারা চলে যান। পরে আহত শরিফুলসহ চারজনকেই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে একজনের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তিনি আরও বলেন, এলাকার নিরীহ মানুষরা এমনিতেই আতঙ্কে আছেন। তার উপর আজ এধরনের ঘটনায় তাদের আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। এরকম ভাবে চললে আমার নিজের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত আমি। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হোক। তাই প্রশাসনের প্রতি কঠোর ভূমিকা পালনের অনুরোধ করছি।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। একটু শুনেছি পোলাপান মারামারি করছে। আমি জানি না। অভিযোগের বিষয়টি আপনার কাছেই শুনলাম।

গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমার কর্মী জাকির হোসেন গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়েছিলো। এসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার ভাতিজা আবুল কাশেম কাশি তাকে বাধা দেন। তিনি প্রতিবাদ জানালে কাশি তাকে চড়-থাপ্পড় দেন। ঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেবো।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন বলেন, পোস্টার ছেড়ার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্তে আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে সত্যতা পেয়েছি। তবে অভিযুক্ত কাউকে ঘটনাস্থলে পাইনি। ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে অভিযোগের বিষয়ে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন রেখে দেন।

ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. আতিকুর রহমান আতিক বলেন, বিষয়টি একান্তই নির্বাচন কর্মকর্তার। তিনি আমাদের কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে বললে অবশ্যই নেবো।

তিনি আরও বলেন, কোন প্রার্থী যদি দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়ায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবো। কাউকেই কোন ছাড় দেওয়া হবেনা।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার বলেন, এব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব প্রার্থীই আমার কাছে সমান। প্রত্যেক প্রার্থীর জন্যই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নির্বাচনী প্রচার,সহিংসতা,ধামরাই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close