গাজী শাহাদত হোসেন, সিরাজগঞ্জ
কর্মসংস্থান হবে ৭ লাখ মানুষের
বাস্তবে রূপ নিচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু
যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। করোনাকালেও থেমে নেই এই এই রেল সেতুর নির্মাণ কাজ। একটির পর একটি পিলারের পাইলিং এর কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি পিয়ারের পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিনিয়তই একটু একটু করে ফুটে উঠছে সেতুটির চিত্র। দিনরাত সমানতালে চলছে এই সেতু নির্মাণের কাজ। যমুনার উপর এই সেতু নির্মাণ দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ লাভ করতে চলেছে। এই রেলসেতুটি নির্মাণ হলে একদিকে যেমন উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ খাতে নবদিগন্তের সূচনা হবে, অন্যদিকে খুলবে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার।
দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। যেটির বাস্তবায়ন এখন দৃশ্যমান। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ৩শ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে সেতুর দুই প্রান্তেই দিনরাত চলছে এই সেতুর নির্মাণ কাজ। ৪.৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ এ রেল সেতুর মোট ৫০টি পিয়ারের মধ্যে ইতোমধ্যে ৪২ নং থেকে ৪৯ নং (৮টি) পিয়ারের পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। আরও কয়েটি পিয়ারের কাজ সমাপ্তের পথে বাকি গুলোর কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। জাপানের অর্থায়ন ও তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ সেতু নির্মাণে কাজ করছে।
রেল সেতুটি বাস্তবায়িত হলে বিদেশ থেকে দেশে আসা মালবাহী ট্রেন রাজধানীর সাথে সরাসরি চলাচল করতে পারবে। এতে আমদানি রফতানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের উপর চাপ কমবে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সমান্তরালভাবে গাড়ি ও রেল চলছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি নির্মিত হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পণ্য পরিবহন খরচ যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। রেল বিভাগের তথ্য মতে, ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত করবে। এছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে বলেও রেল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেল সেতুর পশ্চিমেই গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। এখানে উত্তর জনপদের ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তারা। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ হলে এই শিল্পাঞ্চল থেকে রেলপথ, সড়ক পথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোনো দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পরিবহনও সহজ হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী মহল। এতে এই জনপদের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অপার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেলসেতু নির্মাণ হলে ডাবল লাইনে দ্রুত গতিতে মালবাহী সহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে এ রেল সেতুর ৩৩ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ২০২০ সালে ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ হাজার ৭শ ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। ২০২৪ সালের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমাদের এই জেলাটি এক সময় রেলের শহর হিসেবে খ্যাত ছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার পর শহরের বাইরে দিয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হয়। এতে শহরের সঙ্গে রেলের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের অনেক আন্দোলনের ফলে শহর থেকে একটি ট্রেন চালু হয় রাজধানীর সঙ্গে। এই রেল সেতুটি চালু হলে সিরাজগঞ্জের সঙ্গে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর রেল সংযোগ শুরু হবে। আর এতে উত্তরবঙ্গে নতুন দিগন্ত শুরু হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি ওই এলাকার জন্য আশীর্বাদ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়াও বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহমুদুল কবীর জানান, সিরাজগঞ্জ রায়পুর স্টেশনকে জংশন করা হলে ট্রেন চলাচলসহ যাত্রীদের যাতায়াত আরও সহজ হবে। রায়পুরের রেলওয়ে বিভাগে নিজস্ব বিপুল পরিমাণ সম্পতি থাকায় জংশন নির্মাণ কাজ সহ হবে এবং সরকারের আর্থিক সাশ্রয় হবে।