সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

  ২১ অক্টোবর, ২০২১

সিলেট-আখাউড়া রেলপথ

ঝুঁকিপূর্ণ লাইনে চলছে ট্রেন, উধাও হচ্ছে ক্লিপ-হুক ও পাথর

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট-আখাউড়া রেলপথের কালভার্ট ও সেতু থেকে ক্লিপ-হুক চুরি সিটকে পড়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে রেললাইন। মাঝে মাঝে রেলপথের পাথর সরে গেছে, আবার কোন কোন জায়গায় ঝোপ-জঙ্গলে ভরে গেছে।

ব্রিটিশ আমলের তৈরি রেলপথ সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। বর্তমানে রেলপথের অসংখ্য স্থানে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে রেলপথ ঘুরে দেখা যায়, সিলেট-আখাউড়া রেলপথের শ্রীমঙ্গল থেকে কুলাউড়া পর্যন্ত ৪৫ কি.মি. দূরত্বের পথে স্থানে স্থানে ক্লিপ, হুক চুরি পাথর কমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে রেলপথ। দুই লাইনের স্লিপার সমূহে নাট-বল্টু দিয়ে রেল লাইন আটকানো থাকার কথা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ক্লিপ, নাট-বল্টু নেই। চোরদের কারণে রেলপথ থেকে এসব যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ায় অনেকটা জায়গা ফাঁকা হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে রেলপথের পাথর সরে খালি হয়ে যাচ্ছে। সেকশনের ভানুগাছ, শমশেরনগর, মনু, টিলাগাঁও, লংলা স্টেশনের মাঝখানে অজস্র স্থানে ক্লিপ-হুক নেই। দুলাইনের জোড়া দেওয়া স্থানেও ক্লিপ চুরি হয়ে গেছে।

মনু, টিলাগাঁও, লংলা এলাকায় অধিক পরিমাণে ক্লিপ, হুক, ফিশপ্লেটসহ লোহার যন্ত্রাংশ ব্যাপক হারে চুরি হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমর্রত গ্যাং ম্যানরা (রেল শ্রমিকরা) জানান।

তারা আরও বলেন, সেতু-কালভার্টসমূহের দশা খুবই খারাপ। এসব বিষয়ে নিয়মিত সংস্কার, পাথর ফেলা, ক্লিপ হুক লাগানো প্রয়োজন।

অন্যদিকে দেখা যায়, গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের যথাসময়ে দেখা যায় না গেটগুলোতে দায়িত্ব পালন করতে, যার কারণে অনেকেই ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এর একমাত্র গাফলতির কারণ হচ্ছে গেটম্যান। আবার অনেক গুরুর্ত্বপূর্ণ জায়গায় গেটম্যান নাই।

চুরি যাওয়া এসব যন্ত্রাংশ দ্রুত লাগানোর নিয়ম থাকলেও মাঝে মধ্যে দুএকটি স্থানে লাগানো হয়। তবে যথারীতি পুনঃস্থাপন হচ্ছে না। ফলে এই সেকশন দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কি.মি. বেগে প্রতিদিন যাত্রীবাহী আন্তঃনগর, লোকাল মালবাহী মিলিয়ে গড়ে ১৬টি ট্রেন ঝুঁকি নিয়েই আপ-ডাউন করছে। দুবছর আগেও এই সেকশনের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় কালভার্ট ও সেতু ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে। রেলপথের ক্রুটিপূর্ণ কারণে বিগত বছরসমূহে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় একাধিকবার ট্রেন আটকা পড়ে। দুবছর আগে প্রবল বর্ষণে ঢলে লাউয়াছড়া জাতীয় এলাকায় ১৫৭ নম্বরকাল ভার্ট সেতুর মাটি ধসে রেল সেতু ক্ষতিগ্রস্থ হলে ট্রেন যোগাযোগ ১৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

ভানুগাছ শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি লাউয়াছড়া উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় চারটি স্থানের উঁচু টিলার উপর দিয়ে রেলপথ স্থাপিত। নিয়মিত রেলপথ সংস্কার না করা, রেলব্রিজ পাহাড়ি এলাকায় দেওয়াল না থাকা, ভারী বর্ষণ, টিলা ধস এসব কারণে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় বার বার ট্রেন আটকা পড়ছে। তাছাড়া ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হওয়া, ট্রেনের যাত্রা বাতিল এসব কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উভয় পাশে ট্রেন আটকা পড়ে।

কমলগঞ্জের উপজেলা স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা মানজুরুল আহমেদ আজাদ মান্না, মো. আহাদ মিয়া, সমাজকর্মী রুহুল ইসলাম হৃদয় বলেন, ‘নিয়মিত রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ সংস্কার করা না হলে খুব খারাপের দিকে যাবে রেলপথ। রেলপথে ঝোপজঙ্গল, পাথর সিটকে পড়া, ক্লিপ, হুক ব্রিজ-কালভার্ট সমূহে লোহার পাত চুরি হয়ে যাওয়ায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

ভানুগাছ স্টেশন মাস্টার কবির আহমদ শমসেরনগর স্টেশন মাস্টার উত্তম কুমার বলেন, ‘রেলপথ দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তবে স্টেশন এলাকা বা রেলপথে পাথর কমে যাওয়া, ক্লিপ, হুক চুরির কথা মাঝে মধ্যে শোনা যায়। বিষয়ে আমাদের করণীয় নেই। তারপরও আমরা অফিসিয়ালভাবে কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো।

শ্রীমঙ্গলস্থ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) গুলজার আহমদ বলেন, আমরা রেলপথে হুক, ক্লিপ নিয়মিত লাগিয়ে থাকি। সেগুলো আবার চুরি করে নেয়। যেখানে এগুলো সর্ট হচ্ছে সেখানে পূরণ করে দিচ্ছি। রেলপথে মাঝে মাঝে হুক, ক্লিপ চুরি হয়ে যায়। তবে সেকশনের রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তাছাড়া রেলপথে যেসব স্থানে পাথর কমে গেছে সেসব স্থানে পাথর ফেলা হবে।

পাহাড়ি এলাকায় গাছ ভেঙে পড়াকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঝুঁকিপূর্ণ লাইন,ট্রেন,সিলেট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close