ভোলা প্রতিনিধি

  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

ভোলায় কারাতে প্রশিক্ষণে কিশোরীরা

আর নয় বাল্য বিয়ে এগিয়ে যাবো স্বপ্ন নিয়ে এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে‌ ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার কিশোরীরা নিচ্ছে কারাতে প্রশিক্ষণ।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদ এর নতুন অডিটোরিয়াম রুমে দেখা যায় এমনি চিত্র।

আয়োজক কমিটির সাথে কথা হলে জানা যায়, বখাটে ও উত্ত্যক্তকারীদের লাগামহীন বখাটেপনায় শহর-গ্রামসহ সব জায়গায়ই বিভিন্ন বয়সী তরুণী, কিশোরী ও নারীদের ঘর থেকে বের হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রসহ সর্বক্ষেত্রেই আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মেয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারীদের। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দিনের পর দিন বখাটেদের বেহায়াপনা সহ্য করে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ আবার অপমানে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

এই নির্যাতনের লাগাম টানতে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার আর্থিক সহযোগিতায় ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই কারাতে প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন। এই প্রশিক্ষণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এর প্রায় অর্ধ শতাধিক কিশোরী অংশগ্রহণ করছে।

কারাতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কলেজ শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তার বলেন, আমি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন থেকে এই কারাতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি। নিজের সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই এখানে আসা। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে একজন আত্মপ্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাসী মনে করছি। এখন আর আমার একা চলতে ভয় হবে না।

একই রকম কথা বলে স্কুল শিক্ষার্থী তৃষা নামের এক প্রশিক্ষণার্থী। তিনি বলেন, আমার নিজের আত্মরক্ষার জন্য এই কারাতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি। এখানে এসে সকলের সাথে মিশে নিজের মনে অনেক সাহস যুগিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি আমার মতো সকল মেয়েদের নিজের আত্নরক্ষার জন এই কারাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিৎ। তবে ভবিষ্যতে রাস্তা ঘাটে একা কোন মেয়ে চলাচলে ভয় পাবে না। পাশাপাশি কোন বখাটেরা ইভটিজিং করার সাহস পাবে না। একই রকম আমরা নিজেদের বাল্যবিয়ে সাহস করে নিজেরাই বন্ধ করতে সক্ষম হবো।

কারাতে প্রশিক্ষক মো. নাহিদ হোসেন জানান, আমরা প্রথমত কিক-পান্স-ব্লোক এগুলোই শিখাচ্ছি। যাতে কেউ আঘাত করলে সেখান থেকে সহজেই বের হয়ে আসতে পারে। কৌশল আবলম্বন করে নিজেকে রক্ষা করাটাই এর উদ্দেশ্য।

দেশের প্রতিটি স্থানে নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ এখনো নিশ্চিত হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে প্রায়ই লাঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে নারীদের। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে কারাতে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন এর উপজেলা সমন্বয়ক মো. সুরুজ মিয়া জানান, সারাদেশে বিভিন্ন সময় বখাটে ও উত্ত্যক্তকারীদের দৌরাত্ম্যের শিকার হচ্ছে নারীরা। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকার কাজ করছে। কিন্তু নারী যেন নিজেই তার প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আত্মরক্ষা করতে পারে তাই নারীদের মনোবল বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মরিয়ম বেগম জানান, দেশের প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলের নারী, কিশোরী ও তরুণীদের জন্য এই কারাতে প্রশিক্ষণ সৌভাগ্যের ব্যাপার। সাধারণ শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের নারীরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। তাই সকল নারীদের নিজের আত্মরক্ষাতে এই কারাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিৎ।

এই কারাতের বিভিন্ন কৌশল নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করেন তিনি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভোলা,কারাতে
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close