ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

  ১৮ অক্টোবর, ২০২১

মাছ ধরা নিয়ে যেখানে উৎসব

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সুক নদীতে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এই উৎসবে প্রায় হাজার হাজার সৌখিন, পেশাদার ও স্থানীয় মৎস্য শিকারীরা কয়েক লাখ টাকার মাছ শিকার করেন।

সোমবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ৬টার দিকে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে উপজেলার আক্চা ও চিলারং ইউনিয়নের মাঝামাঝি সুক নদীর উপর নির্মিত বুড়ির বাঁধ এলাকায়।

স্থানীয়রা জানায়, ১৯৮০ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আক্চা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাছ ধরার জন্য গ্রাম ও শহরসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষ ব্যস্ত। নারী-শিশুসহ বৃদ্ধরাও রয়েছেন এ দলে। এ উৎসবে কারও হাতে পলো, কারও হাতে চাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল বা ছেঁকাজাল ও মাছ রাখার খালুই। এছাড়া যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও মাছ ধরতে নেমে গেছেন কাঁদার মধ্যে। মাছ ধরার এ আয়োজনকে ঘিরে বুড়ির বাঁধ এলাকা পরিণত হয় এক মিলন মেলায়। মাছ ধরা দেখতে নদীর চারপাশে ভিড় জমিয়েছে অসংখ্য মানুষ।

আক্চা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন বলেন, বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার পর প্রত্যেক বছরের কার্তিক মাসের এই দিনে বুড়ির বাঁধে জমাট পানি ছেড়ে দেওয়া হয় এবং গ্রামবাসীর জন্য মাছ ধরা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

মাছ ধরতে পঞ্চগড় থেকে আসার সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, প্রত্যেক বছরের এই দিনে তিনি এখানে মাছ ধরতে আসেন। তবে এবার তার সাথে যোগ হয়েছে এলাকার আরও ৫ জন প্রতিবেশি। চাবিজাল দিয়ে ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত তারা প্রায় ২০ কেজি বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরেছেন।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে আসা নগেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, ছেলে খাদেমুলসহ তিনি মাছ ধরছেন। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তিনি ৬ কেজি মাছ ধরেছেন। মাছের মধ্যে রয়েছে বোয়াল, জাপানি রুই, তেলাপিয়া, ট্যাংরা, পুঁটি, শিং, কৈ, মাগুর, শোল প্রভৃতি।

বুড়িরবাঁধ এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর এই দিনে সুক নদীর উপর নির্মিত বুড়িরবাঁধে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠে ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ ও সব বয়সের মানুষরা।

মাছ ধরা নিয়ে বুড়িরবাঁধ এলাকাটি এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মাছ যেমনি হক না, মাছ ধরার আনন্দটা সবচেয়ে বেশি বলে জানান স্থানীয়রা।

বুড়িরবাঁধ এলাকায় মাছ কিনতে আসা ঠাকুরগাঁও শহরের রায়হান কবির বলেন, বুড়িরবাঁধে মাছ ধরার কথা শোনার পর মোটরসাইকেল নিয়ে চলে এসেছি মাছ কিনতে। এখানে তিনি ৩ কেজি পুঁটি মাছ কিনেছেন ৩৬০ টাকা দিয়ে ও ২ কেজি কৈ মাছ কিনেছেন ৪শ টাকা দিয়ে। মাছ কেনার চেয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখে মন ভরে যায় বলে জানান তিনি।

মাছের পাইকার বুলবুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার পর শনিবার ভোরে বুড়িরবাঁধে চলে আসেন তিনি। এসেই বিভিন্ন জাতের মাছ কিনতে শুরু করেন। অনেক কম দামে মাছ কিনেছেন বলেও জানান তিনি।

চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, এভাবেই প্রত্যেক বছর বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠে সবাই। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে এখানে মেলা জমে যায়। শুধু গ্রাম নয়, ঠাকুরগাঁও শহরসহ বিভিন্ন জেলার অনেক মানুষ এখানে মাছ ধরার জন্য ভিড় করে। পানিতে যখন জাল পড়তে থাকে, এ দৃশ্য দেখে মন ভরে যায়।

সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, এখানে সাড়ে ১৭ কেজি মাছের রেণু ছাড়া হয়েছে এ বছর। ৫০ একর এলাকা জুড়ে থাকে মাছের এই অভয়ারণ্য। সারা বছর কাউকে এখানে মাছ ধরতে দেওয়া হয় না। শুধু পানি ছেড়ে দেওয়ার পর এ সময়ই মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাছ ধরা,উৎসব,ঠাকুরগাঁও
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close