তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১৬ অক্টোবর, ২০২১

ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে কোটি টাকার জালিয়াতি

সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলাল (৪০) এর বিরুদ্ধে। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর তাহিরপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবারকে পাকাঘর ও নলকূপ দেওয়ার কথা বলে এ প্রতারণা করেন।

মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলাল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার লইয়ারকুল গ্রামের বাসিন্দা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজিজ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও গ্রামে বিয়ে করার সুবাদে নিয়মিত যাতায়াত করতেন তার ভায়রা এইচ এম ইসমাইল হোসেন একই গ্রামের বাসিন্দা হলেও তিনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং সেখানেই থাকেন। প্রথম দিকে হেলাল সুনামগঞ্জে এলেই তার ভায়রাকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন গ্রামের মানুষদের কাছে ধর্মীয় কথা-বার্তা বলে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে সবাইকে তার প্রতি আকৃষ্ট করতেন। কিছু দিনের মধ্যেই তার এমন বিনয়ী আচার-আচরণে ওই এলাকার মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।

তিনি জানান, ‘সাব সানাবিল সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান নামে তাদের একটি ধর্মীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী অসহায় লোকদেরকে সাহায্য করা হয়। এখানে লাখ টাকা জমা করলে লাখ টাকার ঘর পাওয়ার সুযোগ আছে। আর ১০ হাজার টাকা দিলে একটি নলকূপ দেওয়া হবে। তবে এই সাহায্য পাওয়ার একমাত্র শর্ত হলো আবেদনকারীকে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে আমলদার হতে হবে। এভাবেই অভিনব প্রতারণার কৌশল ব্যবহার করে আজিজ। বিশ্বম্ভরপুর তাহিরপুর উপজেলার প্রায় শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দেন তিনি।

ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের ফালান মিয়া (৩২) বাদী হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজিজ, তার বোন আকলিমা আক্তার (৩৪) আকলিমার স্বামী রেনু মিয়াকে (৪৫) আসামি করে একটি মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

হেলালের ভায়রা বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর মাদ্রাসায় শিক্ষক এইচ এম ইসমাইল হোসেন জানান, আমি আসলে বুঝতে পারিনি তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করবেন। এখন এলাকাবাসীর সামনে মুখ দেখানোটাও দায় হয়ে পড়েছে। অনেকবার উনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারছি না।

মিয়ারচর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, হেলাল সহজ-সরল মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে ধরনের প্রতারণা করার সাহস না পায়।

তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কৃষক লীগ নেতা মোস্তফা মিয়া জানান, আমাদের এলাকার অন্তত ছয়টি গ্রাম থেকে গরিব অসহায় মানুষকে ঘর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে হেলাল। টাকা নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তিনি উধাও হয়ে গেছে। ফোন বন্ধ থাকার কারণে এখন তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না।

দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তারা মিয়া বলেন, দুই উপজেলায় প্রায় শতাধিক মানুষ তার এই অভিনব প্রতারণার ফাদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে। কেউ জমি বিক্রি করে আবার কেউবা গবাদি পশু বিক্রি করে এই টাকাগুলো দিয়েছেন। প্রশাসন উদ্যোগ নিলে হয়তো তারা টাকা ফেরত পেতে পারেন।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা মামলার বাদী ফালান মিয়া বলেন, প্রতারণার শিকার হওয়া সবার পরামর্শ সম্মতি নিয়ে আদালতে মামলা করেছি। আশা করি অতি দ্রুতই আমাদের টাকা ফেরত পাবো।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান জানান, আমরা আদালত থেকে মামলাটি তদন্তের ভার পেয়েছি এবং মামলাটি তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জালিয়াতি,ধর্মীয় অনুভূতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close