এস এম ইসাহক আলী রাজু, গুরুদাসপুর (নাটোর)

  ১৪ অক্টোবর, ২০২১

ঘরে বসে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে স্বাবলম্বী তারা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

নাটোরের গুরুদাসপুরের নাছিয়ার কান্দি গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মোস্তাকিম জনি। বাবা মোঃ লোকমান হোসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি যা আয় করতেন তা দিয়েই অতি কষ্টে চলতো তাদের পাঁচ সদস্যের সংসার। পাঁচ সদস্যের ওই সংসারে মা গৃহিণী। আর তাদের তিন ছেলেই লেখাপড়া করছেন। বাবার একার পক্ষে সংসার চালানো এবং সন্তানদের পড়া-লেখার খরচ চালানো অনেক কষ্টকর হয়ে উঠে।

তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই মোস্তাকিম জনি অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরেন। পড়া-লেখার পাশাপাশি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ফলও পেতে থাকেন ধীরে ধীরে। এখন ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন তিনি। এর সুবাধে ছোট ভাইয়ের পাশাপাশি বড় ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচও চালান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে মোস্তাকিম জনি মেঝ। বড় ভাই শরিফুল ইসলাম ঢাকা কলেজ থেকে গণিতে মাস্টার্স করে এখন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি বিসিএস পরিক্ষার চেষ্টা করছেন। ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম উচ্চ মাধ্যমিক প্রথমবর্ষের ছাত্র।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লি­কেশনের ক্লাস নিতেন মোস্তাকিম জনি। এখানে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে নিজের খরচ চলত। তার বাবা কোকারিজ এর ব্যবসা করলেও বড় ভাই শরিফুল ইসলাম চাকরি পাওয়ার পরে সেটা ছেড়ে দেন।

মোস্তাকিম জনি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কাজ করার পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইন ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজ শিখে ছিলেন। বাবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে সংসার পরিচালনায় সাহায্য করছেন।

মোস্তাকিম জনি ইতিমধ্যে প্রায় ত্রিশটি দেশের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করছেন। এসব কাজের বিনিময়ে ঘরে বসেই উপার্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা।

মোস্তাকিম জনি জানান, মাসে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ইউএস ডলার আয় করছেন তিনি। তার অধীন স্থানীয় কয়েকজন বেকার যুবক কাজ করে তারাও এখন স্বাবলম্বী।

এই ফ্রিল্যান্সার বলেন, নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসায় উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে দেখে ও চট্টগ্রামের কিছু বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কাজ শিখেছেন।

তিনি আরও বলেন, যারা সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে ডিজিটাল প্লাটফর্মে কাজ শুরু করতে পারছেন না, তারা ইউটিউব ও গুগলের সাহায্য নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। তবে অবশ্যই তাকে চেষ্টা ও পরিশ্রমী হতে হবে।

নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবু জাফর মুঠোফনে বলেন, ছোটবেলা থেকেই মোস্তাকিমের কম্পিউটারে কাজ করার প্রতি বেশ মনোযোগ ছিল। তার স্বপ্ন ছিল আইটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করছেন তিনি। তিনি সফলও হয়েছেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গুরুদাসপুর,নাটোর,ফ্রিল্যান্সার,ডলার আয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close