মো. শাহ আলম, খুলনা

  ১২ অক্টোবর, ২০২১

খুলনায় নদী ভাঙন, প্রতি বছর বিপুল অর্থ জলে!

খুলনায় ভাঙনের কবল থেকে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের রক্ষা করতে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ অর্থ পানিতে ফেলতে হচ্ছে। অর্থ্যাৎ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে ঠেকাতে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রক্ষায় তাৎক্ষনিক কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। সংকট কেটে যাওয়ার পর পরের বছর আবারও অর্থ ফেলতে হয় পানিতে। কিন্তু কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব, আত্রাই, আঠারোবাকী ও মজুদখালী চার নদীবেষ্টিত খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সদর, সেনহাটী এবং বারাকপুর ইউনিয়নের অবস্থান। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তিন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থান এবং গুরুত্বপূর্ন রাস্তা অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে ভাঙন দেখা দেয়।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রতি বছর এ সকল ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রতিরক্ষাস্বরুপ অস্থায়ীভাবে বালির বস্তা, জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে সাময়িক ভাঙন রোধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ বাবদ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ দিতে হয়।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে দিঘলিয়া উপজেলার ভাঙন কবলিত ২টি পয়েন্টে প্রায় ৪০ লাখ টাকার বালি ভর্তি বস্তা এবং জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। আবার চলতি অর্থবছর মোমিনপুর, আমবাড়িয়া, চন্দনীমহল, হাজীগ্রাম, দেয়াড়া ৫ নং ওয়ার্ডে লিটন চৌধূরীর গোডাউনের সামনে এবং নগরঘাট খেয়াঘাট সংলগ্ন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পাট গোডাউনের সামনে ভাঙন কবলিত নদীর পাড় জরুরি ভিত্তিতে প্রায় সোয়া কোটি টাকার কাজ চলমান। এর মধ্যে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পাট গোডাউন পয়েন্টেই ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ হাজার ৩৪১ বালু ভর্তি জিও (সিনটেথিক) ব্যাগের ডাম্পি কাজ চলমান।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘দিঘলিয়া উপজেলার মোমিনপুরের আতাই নদীর অতি ভাঙন কবলিত এলাকার ৩০০ মিটার এবং বটিয়াঘাটার কচুবুনিয়ার অতি ভাঙন কবলিত এলাকার ২৫২ মিটার স্থায়ীভাবে অত্যাধুনিকভাবে (ডিআরএমইপি) বাঁধ নির্মাণের জন্য জাইকার কাছে ১১৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জাইকার প্রতিনিধিদল মোমিনপুরে আত্রাই নদীর ভাঙন কবিলত এলাকা সরজমিনে পরিদর্শ করে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন।’

তিনি জানান, খুলনা শহরের কাষ্টমঘাট, দৌলতপুর খেয়াটঘাট সংলগ্ন ভাঙ্গন কবলিত এলাকাসহ অন্যান্য ভাঙনকবলিত এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

প্রকল্পটির নাম ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচাল এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট (সি এস এ ডব্লিউ এম পি)। প্রজেক্টের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮শ’ কোটি টাকা। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে প্রস্তাবনাগুলো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যাবে। এরপর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর একনেকে পাশ হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রজেক্টগুলো পাশ হলে খুলনা শহর এবং পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আর এ বাঁধ নির্মানের ফলে নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধান হবে।

এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক বাঁধের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এ ধরণের কাজে প্রতি বছর সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে এ সকল কাজগুলো বিনা টেন্ডারে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে করা হয়। যার কারণে কাজগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে কি/না সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খুলনা,নদী ভাঙন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close