আহমেদ জামিল, সিলেট

  ১১ অক্টোবর, ২০২১

পুলিশের বিভাগীয় মামলা

সিলেটে রায়হান হত্যার তদন্ত শেষ হয়নি এক বছরেও

সিলেটে আলোচিত রায়হান হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। বছর পেরিয়ে গেলেও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ শুরু হয়নি এখনো। করোনা পরিস্থিতির কারণে ঘটনার ১১ মাস পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। অভিযোগপত্র গঠনের শুনানির জন্য আদালত আগামী ২ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেছেন।

অন্যদিকে রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে করা বিভাগীয় মামলার তদন্তও শেষ হয়নি এক বছরে। বিভাগীয় মামলার আওতায় ৯ পুলিশ সদস্যের মধ্যে পাঁচজন রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। বাকি চারজন সাময়িক বরখাস্ত আদেশে সিলেট মহানগর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত আছেন।

গত বছরের ১০ অক্টোবর রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে এনে নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদ (৩৩)-কে নির্যাতন করা হয়। পরদিন ১১ অক্টোবর সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রায়হান। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রায়হানের স্ত্রীর তান্নি বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। ঘটনার পরপরই ১৩ অক্টোবর প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। গত বছরের ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গত ৫ মে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ৫ পুলিশ সদস্যসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র প্রদান করে। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত এই অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। তবে এখনো বিচারকাজ শুরু হয়নি।

এদিকে বিচারকাজে ধীরগতির কারণে হতাশা প্রকাশ করেছন নিহদ রায়হানের মা সালমা বেগম ও স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। সেই সঙ্গে খুনিদের ফাঁসি দাবি করেছেন তারা। গতকাল রবিবার (১০ অক্টোবর) নগরের চৌহাট্টাস্থ শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এই দাবি জানান তারা।

মানববন্ধনে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও মামলার চার্জশিট দিতে অনেক দেরি হয়েছে। এতে আমরা কিছুটা হতাশ। প্রয়োজনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা হস্তান্তর করে মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা হোক এবং আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।

অন্যদিকে রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা পুলিশের বিভাগীয় মামলার তদন্তও শেষ হয়নি গত এক বছরে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরপরই আকবরসহ পাঁচ পুলিশ ও সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল বাতেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ৯টি বিভাগীয় মামলা হয়। বিভাগীয় মামলা চলা ৯ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৫ জন রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। এসআই আবদুল বাতেন, এএসআই কুতুব আলী ও দুজন কনস্টেবল সাময়িক বরখাস্ত আদেশে মহানগর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত আছেন।

বিভাগীয় মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিআরবি (পুলিশ আইন) অনুযায়ী, কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধমূলক কাজে জড়ালে তার বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শাস্তির (লঘু-গুরু) বিধান আছে। গুরুদণ্ডের আওতায় চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত। লঘুদণ্ডে শুধু দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার বা পদাবনতি। বিভাগীয় মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে শুধু আকবর গুরুদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত কার্যক্রম ফৌজাদারি মামলার মধ্যে নেই। এর মাধ্যমে পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আসছে, সেগুলো বিশ্লেষণ ও তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পুলিশ ও সাধারণ মানুষও রয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ বিভাগেই পাঠানো হবে। পরে বিভাগীয় আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিলেট,রায়হান হত্যা,তদন্ত
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close