ইয়াকুব আলী, চৌগাছা (যশোর)

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ছাত্রাবাসে সাপ-বিচ্ছু-পোকা-মাকড়ের বাসা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

যশোরের চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী সরকারী শাহাদৎ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রবাসের চরম বেহালদশা। প্রায় দেড়যুগ ধরে ছাত্রবাসটি বন্ধ থাকায় অধিকাংশ কক্ষে সাপ পোকা মাকড় ও ময়লা আবর্জনায় ভর্তি রয়েছে। অথচ এর আগে এই ছাত্রবাসটিতে দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে বাইরের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ওই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ফলে উপজেলার শিক্ষানুরাগীরা ছাত্রবাসটি পুনঃসংস্কারের মাধ্যমে আবারও চালু করার জোর দাবি জানিয়েছেন।

১৯২৯ সালে এই উপজেলার কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি শহরের প্রাণকেন্দ্রে ও কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ১২ একর ৭৩ শতক জমির উপর মনোরম পরিবেশে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু থেকেই এই বিদ্যালয় আলো ছড়াতে শুরু করে যা আজও বিদ্যমান আছে। এখান থেকে মাধ্যমিকের শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই দেশ-বিদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর পরই দূরের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে একটি ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়। নাম রাখা হয় মোবারক আলী ছাত্রাবাস। ১০-১২ কক্ষ বিশিষ্ট ছাত্রাবাসে নিয়মিত ৩০-৩৫ জন গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতো। আর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত সে সময়ের বেশ কিছু দক্ষ, অভিক্ষ শিক্ষক, যাদের অনেকেই আজও জীবিত আছেন। কিন্তু ২০০৪ সালের দিকে ছাত্রাবাসটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে বছরের পর বছর এখানে সাপ পোকা মাকড়ের বাসা বাঁধে। তবে সামনের কিছু অংশে বসবাস করছেন স্কুল-মসজিদের ইমাম ও কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে, যার বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা। অনেকে পৌর সদরের বিভিন্ন মালিকানা ছাত্রাবাস কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি সরকারি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের সুনামের পেছনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম একেএম শফিউদ্দিন। তিনি ২০০৩ সালের ১ নভেম্বর অবসরে যাওয়ার পর সৃষ্টি হয় নানা সংকট। তিনি প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন ছাত্রাবাসটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন। এ সময় ওই স্কুলের সাবেক সহকারী শিক্ষক আব্দুস সামাদ, হেলাল উদ্দিন, মিজানুর রহমান মৃধা, হবিবর রহমান পর্যায়ক্রমে ছাত্রাবাসের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রবাসে থেকে লেখাপড়া করে ড. সাইদুর রহমানসহ অনেক ছাত্র এখন সিংগাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু আজ সব যেন ইতিহাস।

এ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বর্তমান চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল বলেন, ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে সরকারি পাইলট স্কুলটি। কেননা, ২০২৯ সাল এলেই শতবর্ষ পূর্ণ হবে এই স্কুলের। এমন একটি বিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস থাকা জরুরি। যেহেতু প্রতিষ্ঠান এখন সরকারি, তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করছি।

প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসটি চালু করা জরুরি। দূরের শিক্ষার্থীরা এখানে লেখাপড়া করে। তাই ছাত্রাবাস চালু থাকলে তাদের জন্য সুবিধা হবে। তবে সেসব বিষয়ে আমি দীর্ঘদিন ধরে উধ্র্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবের মতামত জানতে তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
যশোর,চৌগাছা,মাধ্যমিক বিদ্যালয়,ছাত্রাবাস,পোকা-মাকড়,সাপ-বিচ্ছু,বেহাল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close