মো. লাল মিয়া, তারাগঞ্জ (রংপুর)
ড্রাগন ফল চাষে সফল নারী উদ্যোক্তা শামীমা
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় ড্রাগন ফলের চাষ করে সাড়া ফেলেছেন রংপুরের প্রথম নারী কৃষি উদ্যোক্তা শামীমা আক্তার। উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর খানসাহেব পাড়া গ্রামে শামীমার বাড়ি। তার বাবা শামসুল কাদের সরকার একজন সফল কৃষক। শামীমা আক্তার ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার কৃষিকাজের প্রতিও মোটামুটি আগ্রহী হয়ে উঠেন।
শামীমার বাবা শামসুল কাদের সরকার কৃষি ফসল ও মাছ চাষের জন্য উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে কৃষিখাতের বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন। সেখান থেকেই তিনি কৃষি চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ হন।
শামীমা ড্রাগন ফলের বাগান তৈরির প্রথমদিকে তার বাবা শামসুল কাদের সরকারের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেন। তার বাবার দেওয়া ৫৫ শতক জমিতে ২০১৬ সালে প্রায় ৮০০ ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করে বাগান শুরু করেন।
এই নারী কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, বছরে প্রতিটি গাছে ৫০-৭০টি ড্রাগন ফল ধরে। প্রতিটি ফল ওজনে প্রায় ৬০০-৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ড্রাগন ফল প্রতি কেজি প্রায় ৬০০-১০০০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এরই মধ্যে প্রায় দুইশ কেজি ফল বিক্রি করেছি।
তিনি বলেন, এটি ক্যাকটাসজাতীয় হওয়ায় রোগবালাই কম হয়। এ কারণে সহজেই এ ফল চাষ করা যায়। চারা লাগানোর ১ বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু হয়। আকার-আকৃতি, পুষ্টিগুণ ও দামের কারণে আমাদের দেশের বাজারগুলোতে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ড্রাগনের গাছে তেমন সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বছরে গড়ে দুই-একবার সার দিলে আর তেমন প্রয়োজন পড়ে না। এর গাছে পাতা কম থাকার কারণে পোকার আক্রমণ কম হয়ে থাকে। ভালোভাবে পরিচর্যা করলে দীর্ঘসময় গাছ থেকে ফল পাওয়া য়ায়।
১৯৯৫ সালে প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শামীমা। বিয়ের পর একবার ভ্রমণে ভিয়েতনামে যান। সেখানে গিয়ে ড্রাগন ফল খেয়ে তখনেই মনস্থির করেন যে, নিজের বাড়িতে এই ড্রাগন ফলের চাষ করবেন। তখন থেকেই তিনি বাড়িতে এসে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায় থেকে ড্রাগন ফলের চাষ সম্পর্কে ধারণা নেন।
ফল চাষি এই নারী উদ্যেক্তা বলেন, আমাদের দেশে কৃষক ও খামারিদের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে ফলের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদেশি ফলের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে।
তিনি বলেন, ড্রাগন ফলের চাষের ধারণা নিতে দূর-দূরান্ত থেকে এখন অনেকে আসেন আমার কাছে। আমি তাদের বিভিন্নভাবে ড্রাগন ফলের চাষ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে এর চাষে উদ্বুদ্ধ করি। অনেকে এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদে ও আঙিনায় অল্প করে ড্রাগন ফলের চারা লাগিয়ে চাষাবাদ করছেন।
রংপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, তারাগঞ্জে শামীমা আক্তার যে ড্রাগন ফলের বাগানটি গড়ে তুলেছেন সেটি রংপুরের সবচেয়ে বড় ড্রাগন ফলের বাগান। তিনি রংপুরের প্রথম নারী কৃষি উদ্যোক্তা। আমরা তাকে বিভিন্নভাবে তার বাগানে সহযোগিতা করছি।
তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাছছুম বলেন, আমি শামীমা আক্তারের ড্রাগন বাগানটিতে বিভিন্নভাবে কৃষি সহযোগিতা করছি। তিনি এখন ওই বাগান থেকে মোটামুটি আয় করছেন। এ উপজেলায় ড্রাগন ফলের চাষের জন্য আমরা অন্যদের উদ্বুদ্ধ করছি।