বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কক্সবাজারে প্যারাবন দখলে সিন্ডিকেট, চলছে স্থাপনা নির্মাণও

ধ্বংস হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্য ও পাখির অভয়ারণ্য

কক্সবাজার কস্তুরাঘাটস্থ বাঁকখালী নদীর প্যারাবনে হানা দিয়েছে ১০ দখলদার। সেখানে চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণও। শুধু তাই নয়, বাঁকখালী নদীর তীরে জোয়ারের পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত করে মাটি ভরাটের কাজ চালানো হচ্ছে। প্যারাবন কেটে স্থাপনা নির্মাণের ফলে ধ্বংস হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্য ও পাখির অভয়ারণ্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নীরবতায় বাঁকখালী নদীর তীরে প্রকাশ্যে চলছে এমন দখলযজ্ঞ।

সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেখানে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ একরের মতো প্যারাবন কেটে খাস খতিয়ানের নদী শ্রেণির ২২৬২ দাগের জায়গা দখল করেছে একটি ভূমিদস্যু চক্র। এই দখলবাজ সিন্ডিকেটে রয়েছে মহেশখালী, লিংকরোড, ৬ নম্বর এলাকা ও কস্তুরাঘাট এলাকার ব্যক্তিরা। নামে-বেনামে সাইনবোর্ড দিয়ে জোয়ারের পানিতেই গড়ে উঠছে স্থায়ী স্থাপনাও। আর এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ প্রশাসনের চোখে আড়াল করতে ব্যবহার করেছে টিন ও পলিথিনের ঘেরাও।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, এই দখলকাজে জড়িত রয়েছেন জনৈক সানাউল্লাহ, লিংকরোড এলাকার গ্রীল মিস্ত্রি মো. আলম, ৬ নম্বর এলাকার শিবলু, কামাল মাঝি, কফিল, মহেশখালীর রুকন, কায়সারসহ বেশ কয়েকজন। কয়েকজন দখলদারের দাবি, তারা খুরুশকুল মৌজার অন্তর্গত খতিয়াভুক্ত জমি জমিতে কাজ করছেন। তারা বলেন, খুরুশকুল মৌজায় তাদের জমি নদী হয়ে গেছে। এরপর কক্সবাজার মৌজায় এসে প্যারাবনে বসতঘর নির্মাণ করছেন। তাদের দাবি, এটা নদীর জমি নয়, প্যারাবনের বিষয়ে তারা অবগত নন।

এদিকে অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১নং খাস খতিয়ানের নদী শ্রেণিভুক্ত ২২৬২ দাগের অন্দরে ৫৪ একর ০৪ শতক জমি রয়েছে। সেখান থেকে কোনো বিএস খতিয়ান সৃজিত হয়নি বলেও জানান সদর উপজেলা ভূমি অফিসের কানুন-গো বসন্ত কুমার চাকমা।

কক্সবাজার শহরের আলোচিত ঐতিহ্যবাহী নৌযানের প্রথম ঘাটের নাম ছিল কস্তুরাঘাট। এমন নৌ-ঘাটটি দখল আর দূষণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। শত একরের এই নদীর তীরে জোয়ারের পানি আসলেও ভরে যাওয়ায় এখন নৌযানের যাতায়ান নেই। সেখানে রয়েছে সারি সারি অসংখ্য প্যারাবন ও পাখির অভয়ারণ্য। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে পাঁচ একর জমির মধ্যে সরকারি নৌযান মেরামত কারখানা নির্মাণের প্রস্তাবনার একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাবিত সরকারি কারখানার জন্য জমিটি দখলমুক্ত করাও হয়েছিল। এখন আবার বেদখলে চলে গেছে সরকারি প্রস্তাবিত এই জমিটিও।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বদরমোকাম মসজিদের উত্তর পাশ থেকে বাঁকখালী নদী শুরু। একসময় সেখানে ট্রলার ভেড়ানো হতো। যাতায়াত ছিল মহেশখালী-কুতুবদিয়া লাখো মানুষের। খননের অভাবে ধীরে ধীরে পানির প্রবাহ দূরে সরে গেছে এই কস্তুরাঘাটে। তবে জোয়ারের সময় সেখানে পানি চলাচল হয়। সরকারি বিভিন্ন নৌযান রয়েছে সেখানে। কয়েক মাস আগেও সেখানে প্যারাবনের বড় বড় দুই শতাধিক বাইন গাছ ছিল। দখলদাররা সেগুলো গোপনে কেটে ফেলেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের নীরবতায় দখলদাররা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি নু-এমং মারমা মং বলেন, নদীর তীরে দখলদারের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে। নদী শ্রেণিভুক্ত সরকারি জমিতে কেউ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকাজ করার সুযোগ নেই।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অবৈধ স্থাপনা,ভূমিদস্যু,প্যারাবন,কক্সবাজার
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close