জাহেদ হাছান তালুকদার, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম)

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

দেশি আখে ভাগ্য ফিরল কৃষকের

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ডে দেশি আখের সুমিষ্ট রসে এবার ভাগ্য ফিরল কৃষক মুহাম্মদ আজিজের। আখ চাষে লাভবান হচ্ছেন শত শত কৃষক। একেকজন চাষী লাখ টাকার উপর আয় করছেন। রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে পদুয়া, শিলক, পারুয়া, রাজার হাট, বাঙ্গাল হালিয়া, সরফভাটা সহ বেশ কিছু জায়গায় এ আখ চাষ করা হয়েছে। এতে উপজেলার কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যান্ত অঞ্চলে এবার দেশি জাতের আখের আবাদ করেছেন। উপজেলার পদুয়া, শিলক, পারুয়া, রাজার হাট, বাঙ্গাহালিয়া, সরফভাটা, ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় দেশি আখের আবাদ করা হয়েছে। দিন দিন রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আখের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আখ চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এই চাষাবাদে ঝুঁকছে বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঠে প্রান্তরে গিয়ে দেখা যায়, শরতের হিমেল হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দুলছে সারি সারি সুমিষ্ট আখ।

মুরাদনগর এলাকার কৃষক জব্বার বলেন, আশ্বিন মাসের শুরুর দিকে আখের চারা লাগানো হয়। এক বছর পর এই আখ খাবার উপযোগী হয়। ভাদ্র মাসের শুরুর দিকে আখ তোলা হয় বাগান থেকে। এই আখ বড় করতে সার, ফসফেট, গোবর, ছাই ব্যবহার করা হয়। আখ চাষে তেমন কোনো খরচ না থাকায় চাষীরা লাভবান হচ্ছে বেশি।

উপজেলার পদুয়া এলাকার কৃষক জব্বার বলেন, একটি বিষয় হলো এক বছর যে জমিতে আখের চাষ হয় সে জমিতে পরবর্তী বছর আখের চাষ হয় না। ওই জমিতে আখের বদলে অন্য সবজির চাষ করা হয়। সবজি চাষের পর পুনরায় একই জমিতে আখ চাষ করা যায়।

আখ চাষী আজিজ মিয়া বলেন, আখ চাষ করে তিনি মহা খুশি। অন্যান্য বার থেকে এই বার প্রথম আখ চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছি। মাত্র ২ শতক জমির উপর আখ চাষ করতে খরচ পড়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে তিনি ১ লক্ষ টাকার মত আখ পাইকারি দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। আরো প্রায় ৪০ হাজার টাকার মত আখ তার বাগানে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সামনে হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে তিনি বাকি আখগুলো রেখেছেন ভালো দামে বিক্রির আশায়।

সরেজমিনে আজিজ মিয়ার ক্ষেতে গেলে দেখা যায়, দেশি জাতের বলে গায়ের রং উজ্জ্বল হালকা হলুদ রংয়ের হয়। কমপক্ষে ১২/১৩ ফিট লম্বা মাঝারি মোটা আখগুলো সারিবদ্ধভাবে সোজা দাঁড়িয়ে আছে। নুইয়ে পড়া ঠেকাতে প্রত্যেক সারির মাঝে মাঝে বাঁশের শক্ত খুঁটিতে মোটা দড়ি বাঁধা। প্রতিটি লাইনের মাঝখান দিয়ে ভালোভাবে চলাফেরা করা যাচ্ছে। ক্ষেতের এক পাশ থেকে বেশ সাজানো গোছানো।

রাঙ্গুনিয়ার পৌরসভার নোয়াগাঁও এলাকার আখ বেপারি আব্দুল মালেক বলেন, তিনি এবার ১ লাখ টাকা দিয়ে ৩টি আখের বাগান কিনে নিয়েছেন চাষীদের কাজ থেকে। ইতোমধ্যে তিনি ৭০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছেন বলে দাবি করেন। কৃষক প্রতি এক’শ পিচ আখ সাইজ অনুযায়ী ২ হাজার টাকা করে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।

রাঙ্গুনিয়ার উপজেলার কৃষি কার্যলায় সূত্রে জানা যায়, একটি জমিতে বছরে এক বার আখ চাষ করা যায়। আখ চাষের পর ওই জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসলের চাষ করে পরের বছর আবার আখ চাষ করতে হয়। অর্থাৎ একই জমিতে বার বার আঁক চাষ করা যায় না। করলে ফলন হয় না।

এই বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কাজী রমিজ আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় সবজি থেকে আখের ভালো ফলন হয়। বর্তমানে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আখের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন বেশি। আখের দুই ধরনের রোগ দেখা দেয়। লালচে ও রেখা রোগ। পাশাপাশি মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারলে আখের ভালো ফলন হয়। তাই সঠিক পরিমাণে সার, পানি ও প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করলে এখানকার কৃষকরা ভালো লাভবান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চট্টগ্রাম,রাঙ্গুনিয়া,ইছামতি নদী,আখ চাষ,ভাগ্য বদল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close