সাহারুল হক সাচ্চু, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ)

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মাছ নেই, শুটকি চাতালগুলোর ব্যবসায় মন্দা

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এ বছর শুটকি চাতালগুলোয় তেমন ব্যবসা নেই। কারণ শুটকি করতে পর্যাপ্ত মাছ মিলছে না। তাই চাতালগুলোয় কাজ করা নারী শ্রমিকদেরও ছাঁটাই করা হয়েছে। যেখানে একশ’রও বেশি নারী শ্রমিক শুটকি চাতালগুলোতে কর্মে নিয়োজিত ছিলেন, সেখানে মাত্র ২০/২৫ জন নারী শ্রমিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

উল্লাপাড়া উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের মোহনপুর এলাকায় প্রায় আড়াই যুগ আগে মাছ শুটকি করার চাতাল শুরু হয়। ক'বছরেই বহু সংখ্যক চাতাল গড়ে উঠে। উধুনিয়া সড়কের দু'ধারে মাছ শুকানোর চাতালগুলো বসানো হয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বসানো চাতালগুলো টানা মাস পাঁচেক চালু থাকে। ব্যবসা হয় জমজমাট। এবারও চাতাল বসানো হয়েছে। তবে ব্যবসায় মন্দা চলছে।

একাধিক চাতাল মালিক জানান, প্রতিদিন ভোরে স্থানীয় লাহিড়ী মোহনপুর মাছ বাজারের আড়ত ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা শুটকি করার জন্য দেশীয় নানা জাতের মাছ পাইকারি দরে কিনে আনেন। তারা দেশীয় পুঁটি, টেংরা, চাঁদা, বাইনসহ নানা জাতের ছোট মাছ কিনে এনে চাতালগুলোয় শুটকি করেন। এরপর তা সৈয়দপুর, রংপুর, জামালপুর জেলার বিভিন্ন মোকাম বাজারে পাইকারি বিক্রি করেন। মোহনপুর এলাকায় প্রায় ১৫ জন শুটকি চাতাল ব্যবসায় জড়িত আছেন বলে জানানো হয়।

সরেজমিনে মোহনপুর এলাকায় গিয়ে আরো জানা গেছে, শুটকি চাতাল ব্যবসায় জড়িতদের ক'জন হলেন—ফরহাদ সরকার , আউয়াল প্রামাণিক, হবিবর শেখ, সাচ্চু মন্ডল, ইউসুফ ফকির, নুর মোহাম্মদ, কবির শেখ, রফিকুল ইসলাম, শাহ আলম, নজরুল ইসলাম। তারা সবাই দেড় থেকে প্রায় দু'যুগ ধরে এ শুটকি চাতাল ব্যবসায় জড়িত আছেন।

তারা জানান, চাতালগুলোয় মাছ শুকানো থেকে শুরু করে বাছাইয়ের যাবতীয় কাজে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি। নারী শ্রমিকদের ক'জন হলেন—আছিয়া খাতুন, মালেকা খাতুন, আলেয়া বেগম, জয়ন্তী দাস, ফুলমতি দাস, মহিরন বেগম, রাবেয়া খাতুন। এরা সবাই দিন হাজিরায় চাতালে কাজ করেন। দিনের মজুরি দু'শো টাকায় ভোর থেকে সন্ধ্যার আগ অবধি কাজ করেন।

প্রতিবেদককে মহিরন বেগম, আছিয়া খাতুনসহ প্রায় সবাই জানান, তারা সংসারের বাড়তি আয়ে এখানকার চাতালগুলোয় কাজ করেন। উপজেলার চন্দ্রগাতি গ্রামের মহিরন বেগম ও রাবেয়া খাতুন বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়ক পথ পায়ে হেঁটে এখানে এসে কাজ করে আবার পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফেরেন বলে জানান। তাদের কথায়, সংসারের বাড়তি আয়ে চাতাল বসার শুরু থেকে পুরো মৌসুম কাজ করেন।

প্রতিদিনের সংবাদকে কবির শেখ, সাচ্চু মন্ডল বলেন, মোহনপুর এলাকা থেকে প্রতি বছর পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচশো মন শুটকি মাছ বিভিন্ন এলাকায় মোকাম বাজারে বিক্রি করা হয়। সেখানে এবারে এ যাবত প্রায় বিশ থেকে পঁচিশ মন মাছ বিভিন্ন এলাকায় মোকাম বাজারে বিক্রি হয়েছে। পর্যাপ্ত মাছ না থাকায় চাতালগুলোর শ্রমিক সংখ্যা কমানো হয়েছে। এবারে স্বাভাবিক বর্ষা না হওয়ায় মাছ মেলেনি। আবার মৌসুম পেরিয়ে অনেকটা অসময়ে স্বাভাবিক বর্ষা হলেও পানি থেকেছে মাত্র ক'দিন। এতে করে সব মিলিয়ে পর্যাপ্ত মাছ না মেলায় চাতালগুলো কোনোমতে চালানো হচ্ছে বলে জানান তারা।

চাতাল মালিকরা জানান, এখানকার চাতালগুলোর প্রায় সবাই নারী শ্রমিক। মৌসুমকালে যেখানে শতাধিক নারী শ্রমিক কাজ করেন। সেখানে এবারে মাত্র বিশ থেকে পঁচিশ জন নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। তাদের কথায়, এবারের মৌসুমে মাত্র একশো মণ মাছ শুটকি করার আশা করছেন তারা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শুটকি চাতাল,উল্লাপাড়া,ব্যবসায় মন্দা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close