সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কালাপাহাড়ের ৭ ঝরনায় ক্নান্তি দূর হয় পর্যটকের

চারদিকে শুধু উঁচুনিচু পাহাড়। কি নেই ওখানে। বাদ পড়েনি প্রকৃতির সঙ্গে মিতালীর কোনো উপকরণই। দৃষ্টিজুড়ে মনখোলা নৈসর্গিক প্রকৃতির লীলা নিকেতন। প্রকৃতির এমন উজার করা রূপ মাধুর্য আকৃষ্ট করে যে কাউকে। শীত আর গ্রীষ্ম। দু’মৌসুমে এখানকার প্রকৃতির দু’ধরনের রূপ। সারা বছরই পর্যটকদের মুগ্ধ করতে প্রস্তুত সবুজ প্রকৃতির মৌলভীবাজার। আর মৌলভীবাজারের কালাপাহারের ঝরনায় অবগাহন করে নিমিষেই ক্লান্তি দূর করেন পর্যটকরা।

প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে প্রকৃতিকে উপভোগ করার মজাই আলাদা। প্রকৃত প্রকৃতিপ্রেমীরা সুযোগ পেলেই তাই পরিবার পরিজন নিয়ে কালাপাহাড় ঘুরে বেড়াতে চলে আসেন এখানে।

প্রাকৃতিক বন ও পাহাড়ি বৈচিত্র্যময় পরিবেশের কারণে পর্যটকদের কাছে এক অনন্য নাম কালাপাহাড়। এটি দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ চূড়া। ভূ-পৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১১শ ফুট। কালাপাহাড় বৃহত্তর সিলেটের সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে খ্যাত।

কালাপাহাড়টি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধার ইউনিয়নে অবস্থিত। কালাপাহাড়সহ চা-বাগান, পাহাড়, টিলা, ঝরনা ও লেকসহ অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক নাম কর্মধার। কর্মধার প্রায় ৩০ শতাংশ জায়গাজুড়ে কালাপাহাড়ের অবস্থান। কুলাউড়া থেকে আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের এই পাহাড়ের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে পড়েছে এবং বাকি অংশ ভারতের ঊনকোটি জেলায় অবস্থিত।

প্রাকৃতিক ঘন জঙ্গল, বন্য প্রাণী, সাপ, বানর, হাতি, হরিণ একসময় বাঘও ছিল কালাপাহাড়ে। এই পাহাড় সময়ের সাথে কয়েকটি নামে পরিচিতি লাভ করেছে। লংলাপাহাড়, হারারগজ পাহাড়, সাড়েরগজ পাহাড় থেকে এখন কালাপাহাড়।

বন বিভাগের কাছে পৃথিমপাশা একোয়ার্ড ফরেস্ট নামে রেকর্ডভুক্ত এই পাহাড়ে রয়েছে আকর্ষণীয় বেশ কয়েকটি ঝরনা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পর্যটন প্রিয়দের জন্য প্রকৃতির স্বর্গ হতে পারে এই কালাপাহাড়টি।

কালাপাহাড়ের আনাছে কানাছে লুকায়িত মানুষ দর্শন পায়নি এমন ঝরনাও রয়েছে বেশ কয়েকটি। কর্মধা ট্রাভেলার গ্রুপের সাথে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা মেলে আকর্ষণীয় ৭টি ঝরনার। পাষাণের ধর ঝরনা, বেলকুমা ঝরনা, জাহাজমারা বাবা ঝরনা, উপলিয়া সং ঝরনা, শোলকুটার সং ঝরনা, জাহাজমারা পাদদেশ-১ ও জাহাজমারা পাদদেশ-২ ঝরনা ছাড়াও ছোট-বড় আরো কয়েকটি জলপ্রপাত রয়েছে এই পাহাড়ে। এখানে প্রাকৃতিক বনের ভেতরে নৈসর্গিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

কর্মধা ট্রাভেলার সদস্য আক্তার হোসেন জানান, কালাপাহাড়ে ছোট বড় অনেকগুলো ঝরনা রয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলে কালাপাহাড় হতে পারে অপার সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন এলাকা।

ট্রাভেলার গ্রুপের সমন্বয়ক প্রদীপ কুমার সিংহ জানান, আমরা প্রকৃতির টানে একঝাঁক তরুণ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করি। আজ কালাপাহাড়ে এসেছি। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি আকর্ষণীয় অনেকগুলো জলপ্রপাত রয়েছে। যা দেখার পর পাহাড় ভ্রমণের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় এবং পাহাড় ভ্রমণের অনুপ্রেরণা জোগায়।

জাহাজমারা ঝরনা ভ্রমণ করে হাসান আল-মামুন নামে এক পর্যটক বলেন, বয়সের চাপ থাকাসত্ত্বেও প্রকৃতির টানে কর্মধার কালাপাহাড়ে ছুটে এসেছি। এখানে আসার মতো সড়ক পথের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু ঝরনাগুলোর ছন্দময় পানির কলকলানিতে সবধরনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। এখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলে পর্যটন খাত সমৃদ্ধ হবে।

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক বলেন, কর্মধার কালাপাহাড় অনেক গুণে গুণান্বিত, পাহাড়ের চূড়া থেকে পাশের হাকালুকি হাওর দেখা যায়। এখানে অনেক ঝরনা রয়েছে। যার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পাহাড়ি দুর্গম পথ অতিক্রম করে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। কালাপাহাড়কে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করে টুরিস্ট পুলিশ ও যাতায়াতের সুব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান বলেন, মৌলভীবাজার জেলার সমগ্র প্রকৃতিই পর্যটকের আকৃষ্ট করে। কর্মধার কালাপাহাড়ের ৭টি ঝরনায় যাতে পর্যটকরা যেতে পারে আমরা কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা করবো। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভ্রমণ,পর্যটন,কালাপাহাড়,জলপ্রপাত,ঝরনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close