পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

গ্রেপ্তার বাণিজ্যের প্রতিবাদ করে গ্রামছাড়া কয়েকটি পরিবার  

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই শাহ আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, গ্রেপ্তার বাণিজ্যের প্রতিবাদ করায় গ্রামছাড়া হয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার কয়েকটি পরিবার।

অভিযোগ রয়েছে, এসআই শাহ আলম চরসিন্দুর ইউনিয়নের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এলাকার নিরীহ ও অসহায় মানুষদেরকে ধরে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দাবিকৃত টাকা না দিতে পারলে মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানোর ভয় দেখানো হচ্ছে তাদের।

এছাড়া এসআই শাহ আলমের কাছে অভিযোগ নিয়ে যাওয়া বাদীরা জানিয়েছেন, কোনো ঘটনায় তার দ্বারস্থ হলে বিবাদীদের কাছ থেকে মোটা অংকের উপরি গ্রহণ করে উল্টো বিবাদীদের হয়রানি করছেন তিনি।

ভুক্তভোগী চরসিন্দুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বুরুজ মিয়ার ছেলে শরিফ মিয়া (রিকশা চালক) জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা রাতে তাকে আটক করে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যায় এসআই শাহ আলম। মধ্য রাত পর্যন্ত অমানবিক নির্যাতন শেষে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। পরে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে দারদেনা করে তার স্ত্রী তানজিনা আক্তার ১০ হাজার টাকা এসআই শাহ আলমের হাতে তুলে দেন।

এদিকে একের পর এক এমন ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সমাজকর্মী রাবেয়া আক্তার সাথী, স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ উদ্দিন ভূইয়া ও ভুক্তভোগি পরিবার গুলো চরসিন্দুর ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই শাহ আলমের অপকর্ম ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে অপসারণ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এরপরই পুলিশের ওই উপ-পরিদর্শক প্রতিবাদে অংশ নেওয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানোর ভয় দেখানো হচ্ছে তাদের। ফলে অনেক পরিবারের সদস্যরা ভয়ে এখন বাড়িছাড়া।

আয়শা আক্তার নামের এক ভুক্তভোগি জানান, তার স্বামীর কাছ থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে সম্প্রতি চরসিন্দুর পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে অভিযোগ দেন। কিন্তু এসআই শাহ আলম তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তার স্বামীর কাছ থেকে টাকা খেয়ে অভিযোগের কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা নেননি।

সমাজকর্মী রাবেয়া আক্তার সাথী মুঠোফোনে জানান, এসআই শাহ আলমের অপকর্ম ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যের প্রতিবাদ জানানোর কারণে ওই এসআই আমাকে মাদক মামলা দেওয়াসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। মিথ্যা মামলার ভয়ে এখন আমি বাড়িছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েও এখনো কোনো সমাধান পাইনি।

চরসিন্দুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফরিদ উদ্দিন ভূইয়া জানান, ইতিমধ্যে এসআই শাহ আলমের এমন অপকর্ম ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যের বিষয়ে আমার কাছেও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছে। আমি এসব বিষয়ে এসআই শাহ আলমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সব ঘটনা অস্বীকার করেছেন।

অভিযুক্ত চরসিন্দুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই শাহ আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমার বক্তব্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আপনি ওনাদের সাথে কথা বলতে পারেন। নতুন করে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইনামূল হক সাগর বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে ঘটনাটির খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গ্রামছাড়া পরিবার,গ্রেপ্তার বাণিজ্য,পুলিশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close