দৌলতখান (ভোলা) প্রতিনিধি

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

করোনায় স্কুলমুখী মেয়েদের বাল্যবিয়ে

করোনা মহামারির দীর্ঘ ৫৪৩ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলেও বহুশিক্ষার্থী আর বিদ্যালয়মুখী হবে না। দেড় বছর শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাদ্রাসার ৩০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এদের একটি বড় অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

দৌলতখান উপজেলার শতবর্ষী সুকদেব মদন মোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্রীর করোনাকালীন সময়ে বাল্যবিয়ে হয়েছে। ছেলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হারও কম নয়।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হোসেন হারুন বলেন, বর্তমানে তার বিদ্যালয়ে ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। অনুপস্থিত ছাত্রীর সংখ্যা ৫০। অনুপস্থিত ছাত্রীদের সংখ্যা মোট মেয়ে শিক্ষার্থীর ৩০ শতাংশ। শোনা যাচ্ছে করোনাকালে এদের সবার বাল্য বিয়ে হয়েছে। অনুপস্থিত ছাত্রদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। পড়ালেখা ছেড়ে এরা উপার্জনমুখী বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।

তিনি বলেন, করোনার কারণে টানা ১৮ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখানকার নিম্ন আয়ের দরিদ্র অভিভাবকরা তাদের ছেলেদেরকে নদীতে মাছ ধরা, দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক, দোকান কর্মচারী হোটেল রেস্তোরাঁয় কাজে দিয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঝরে পড়াদের মধ্যে জেলে পরিবারের সন্তানরাই বেশি।

উপজেলার বৃহত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজহার আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম. তাহের জানান, গত দেড় বছরে তার বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শতাধিক ছাত্রীর গোপনে বাল্যবিয়ে হয়েছে। করোনায় দীর্ঘদিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কিছু শিক্ষার্থী ছোটখাটো চাকরি ব্যবসায় যোগ দিয়েছে।

তিনি বলেন, উপজেলার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাজিপুর সিনিয়র মাদ্রাসা, জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খাদিজা খানম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জয়নাল আবেদীন ল্যাবরেটরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরপাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও ঝরে পড়া বাল্যবিয়ের একই তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে উপজেলার দুইটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, ওই দুই বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার কোন তথ্য নেই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজান আলী শেখ বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করেছি। করোনাকালীন দীর্ঘ ছুটিতে দরিদ্র অভিভাবকরা মেয়েদেরকে ঘরে বসিয়ে না রেখে অনেককে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তবে ঝরে পড়ার হার ১৮ থেকে ২০ শতাংশ হবে। ঝরে পড়াদের মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীই বেশি।

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দৌলতখান,করোনাভাইরাস,মহামারি,ছাত্রী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close