চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
শিক্ষার্থীদের বই ও ড্রেস-জুতা নিয়ে বিপাকে অভিভাবকরা
দীর্ঘদিন পর হলেও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে চালু হলো যশোরের চৌগাছা উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম। এ উপজেলায় ১০টি কলেজ, ৪৯টি স্কুল, ২১টি মাদ্রাসা ও ১৩৯টি প্রাথমিক স্কুলে প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরে পেয়েছে। প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মত।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই মৃধাপাড়া মহিলা কলেজসহ অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হয়। একই সাথে হ্যান্ড-স্যানিটাইজারও হাতে লাগানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গোলাপ ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে সরকারের নির্দেশনা অনুয়ায়ী অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুলের শ্রেণি কক্ষ, চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিল পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন এবং ধোয়া-মোছা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নতুন সাঁজে সেঁজেছে।
দেড় বছর শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস ও জুতা ঠিক মতো গায়ে লাগছে না। এমনও দেখা গেছে অনেক শিক্ষার্থীর বই ও খাতা-কলমের হদিস ছিলো না। ফলে বছরের শেষের দিকে এসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বিপাকে পড়েছেন।
অভিভাবক ও শিক্ষক ফাতেমা খাতুন জানান, এত দিন পর স্কুল খুলছে, তা শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি আনন্দের। কারণ তারা এই দীর্ঘ সময়ে বাড়িতে থেকেছে। এখন তাদের স্কুল খুলছে বলে নতুন স্কুল ড্রেস ও জুতা পরতে চায়। আগের স্কুল ইউনিফর্ম ও জুতা নতুন, তবে তা দেড় বছর আগের হওয়ায় আর পরা যাচ্ছে না। এখন বায়না ধরেছে এসব নতুন কিনে দিতে হবে। কী আর করার, বছর শেষের দিকে নতুন পোশাক বানিয়ে দিতে হবে।
অন্য আরেক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে এবার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। নতুন ড্রেস বানিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু করোনার কারণে ক্লাস তো আর শুরু হলো না। সব ড্রেস, জুতা ছোট হয়ে গেছে। এখন নতুন করে সব বানাতে হবে।
একই অবস্থার কথা জানালো চৌগাছা সরকারি শাহাদৎপাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফিন। তিনি জানান, স্কুলে যাওয়ার জন্য জুতা, ড্রেস, ব্যাগ সবই বেমানান হয়ে গেছে। অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যা সময়ের সঙ্গে ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় বলে এই শিক্ষার্থী মনে করে। এদিকে কাপড়ের দোকানেও ড্রেস মিলছে না।
এ বিষয়ে চৌগাছা রেসিডেনসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দিন বলেন, কিন্ডারগার্টেন এন্ড প্রি ক্যাডেট স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, গত বছর স্কুলে নতুন ড্রেস আর জুতা পরে যাওয়া হয়নি। এখন স্কুল খুলবে বলে আমি খুব খুশি। স্কুল ড্রেস, জুতা এগুলো সবই নতুন কিন্তু অনেকটা ছোট হয়ে গেছে। ফলে বাবাকে বলেছি নতুন ড্রেস বানিয়ে দিতে।
চৌগাছা মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. এম মোস্তানিছুর রহমান জানান,সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার জন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মোমিটার, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণও রাখা হয়েছে। আমরা আজ প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের স্বল্প পরিসরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গোলাপ ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছি।
এ সময় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. রফিকুজ্জামান, থানার অফিসার্স ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম সবুজ ও পৌর মেয়র নুর উদ্দিন আল মামুন হিমেলও উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাজিুর রহমান জানান, প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে সরকার ‘কিডস অ্যালাউন্স’ নামে প্রতি বছর ১ হাজার টাকা করে দেয় স্কুলের ড্রেস, জুতা ও ব্যাগ কেনার জন্য। এটি শুধু সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য। এ বছর এই টাকা এখনো অনেক স্কুলে দেওয়া হয়নি। তবে অনেক শিক্ষার্থীর স্কুল ড্রেস ও জুতা ছোট হয়ে গেছে তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নতুন ড্রেস আর জুতার জন্য।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. রফিকুজ্জামান বলেন,অনেক দিন পর শিক্ষার্থীরা প্রিয় বিদ্যালয়ে আসবে এতে আমরাও আনন্দিত। আজ উপজেলার মৃধাপাড়া মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরজমিনে পরিদর্শন করে খোজঁ খবর ও নিয়েছি। প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ভালোই ছিলো।
পিডিএসও/ জিজাক