বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার
সমুদ্র সৈকতে উপচেপড়া ভীড়
স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না পর্যটকরা
স্বাস্থ্যবিধি যেন ভুলে গেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই, মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। তাদের দেখে মনেই হয় না করোনাভাইরাস বলতে কোনো মহামারি বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা।
এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে গুণতে হবে জরিমানা । তারপরেও পর্যটন নগরী কক্সবাজারে মাস্ক ব্যবহারে সচেতন নয় স্থানীয়সহ পর্যটকরা।
শুক্রবার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড়। মাস্কবিহীন ঘুরাফেরা করছে অসংখ্য পর্যটক। তাদের স্বাস্থবিধি মেনে চলার কোনো কিছুই নজরে আসেনি। সমুদ্রে নামার সময় টুরিস্ট পুলিশের একটি দল মাস্ক পরিধানে বাধ্য করলেও বালিয়াড়িতে গিয়ে তা খুলে ফেলে দিচ্ছে। এদিকে পর্যটন এলাকা কলাতলী ও সমুদ্র সৈকতে জেলা প্রশাসনের কোনো তদারকি চোখে পড়েনি এই প্রতিবেদকের।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে স্থবির অবস্থায় ছিল কক্সবাজার পর্যটন এলাকা। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র, পাহাড়, সবুজ অরণ্য, সব কিছু মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসে প্রতিদিন লাখো পর্যটক। করোনা মহামারির মধ্যেও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে।
প্রতিদিন সকাল থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের পদচারণায় মুখর সৈকত। এছাড়াও মেরিন ড্রাইভ সড়ক, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানীর পাথুরে সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ জেলা পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অসংখ্য পর্যটকদের ভিড়।
অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান টেকনাফের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাচ্ছে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ভ্রমণ পিপাসু। নিয়মিত যাতায়াত করছে অন্তত ৩ হাজার পর্যটক। তবে এসব পর্যটন কেন্দ্রে করোনা সংক্রমণ রোধে ট্যুরিস্টসহ প্রশাসন নানা ব্যবস্থা ও উদ্যোগের কথা জানালেও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
সপ্তাহে শুক্রবার, শনিবার অফিস সমূহ সরকারি বন্ধ থাকার কারণে কক্সবাজারে পর্যটক বেড়ে দাড়ায় কয়েক লাখ। কিন্তু এই করোনাকালীন অধিকাংশ লোকের মুখে মাস্ক নেই। মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। গত শুক্রবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ও লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। কিন্তু সমুদ্রে আসা অধিকাংশ পর্যটক মাস্ক ব্যবহার করছেন না। জেলা প্রশাসন যে শর্তে পর্যটন খাত খুলে দেওয়া হয়েছিল তা মানা হচ্ছে না। এতে করোনার দ্বিতীয় ধাপে করোনা রোগী বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এই মানুষদের যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো প্রবণতা নেই। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের নেই কঠোর নজরদারি। জেলা প্রশাসন শর্ত সাপেক্ষে হোটেল মোটেল চালু করার অনুমতি দিলেও হোটেল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
অধিকাংশ হোটেলে তাপমাত্রা মাপা হয় না যন্ত্র থাকার পরেও। পর্যটকদের এমন ভিড় দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কে আছেন যেকোনো মুহূর্তে ভাইরাসের হটস্পটে পরিণত হতে পারে তাদের আবাসস্থল।
ব্যতিক্রম কথা বলেছেন হোটেল রিগ্যাল প্যালেসের মালিক ফোরকান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রশাসনের সমস্ত নিয়ম মেনে আমরা হোটেল পরিচালনা করছি। আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পর্যটকদের হোটেলে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি। এই বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময় ধরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট।
সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা কক্সবাজার শহরের স্থানীয় বাসিন্দা এসএম বেলাল জানান, অধিকাংশ পর্যটকদের মুখে মাস্ক নেই। মানছে না প্রশাসনের নির্দেশনা। করোনার দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে কড়াকড়ি থাকলেও সাগর পাড়ে তার কোনো বালাই নেই। জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উচিৎ মনে করেন এই আইনজীবী।
আরেফিন বলেছিলেন, ঢ়াকা থেকে আসার সময় বাসকর্তৃপক্ষ কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানছে তা নজরে আসেনি। লোক তুলেছে আগের মতো। কোন স্বাস্থ্যবিধি নাই। কক্সবাজারে এসে দেখি প্রচুর মানুষের ভিড়। এতো মানুষের ভিড় চিন্তাও করিনি। অনেকদিন বাড়িতে লকডাউনে থাকার কারণে আমি মাইন্ড রিফ্রেশ করতে এসেছি। পরিবারের অন্যরাও এসেছে। কিন্তু এসে ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ জানান, করোনার সেকেন্ডওয়েভ মোকাবেলায় তাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আবাসিক হোটেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের করণীয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরও যারা নির্দেশনা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি জানান, করোনা সতর্কতা সৃষ্টিতে জেলাব্যাপী মোবাইলকোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে গঠিত টিম প্রতিদিন মাঠে যাচ্ছে। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণও কাজ করছেন। তবে, প্রশাসনের কড়াকড়ির পরেও জনসমাগম কোনমতেই কমছে না। বেশীরভাগ মানুষ মাস্কবিহীন চলাফেরা করছে।
পিডিএসও/ইউসুফ