কে এম রুবেল, ফরিদপুর

  ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

দাম নিয়ে হতাশা

ফরিদপুরে সাড়ে দশ লাখ বেল পাট উৎপাদন

সোনালি আঁশ ‘পাটে’র রাজধানীখ্যাত ফরিদপুরে পাটের ফলন ভালো হলেও, দাম নিয়ে কিছুটা হতাশ পাট চাষিরা। চলতি মৌসুমে এই জেলায় পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিলো সাড়ে দশ লাখ বেল (১৮০ কেজিতে এক বেল)।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত ২০১০-১১ সালে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে চাষীরা এর বিপরীতে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন হয়।

আর চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল (১৮০ কেজিতে ১ বেল)। গত দশ মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে নয় হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।

জেলার পাট উৎপাদনে প্রসিদ্ধ নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী উপজেলার পাট চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি পাট উৎপাদন মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে পাট আবাদে একাধিক সেচ দিয়ে পাট বপন করায় শুরুতেই চাষিদের বাড়তি খরচ হয়েছে। আবার পাট কাটায় ও পাট নেওয়া-ধোয়ায় ও শুকাতে অন্যান্য বছরের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি।

বর্তমান জেলার পাটের বাজার কানাইপুর, সাতৈর, কৃষ্টপুর, নগরকান্দা, সালথা গিয়ে দেখা যায়, চলতি সপ্তাহে মণপ্রতি পাটের দর কৃষক পাচ্ছে প্রকার ভেদে ৩২শ থেকে ২৮শ টাকা।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী রথিন্দ্র নাথ সিকদার নিপু জানান, উৎপাদন মৌসুম শুরুতে পাটের দর মণ প্রতি ৪ হাজার পর্যন্ত গিয়ে ছিলো। বর্তমানে (চলতি সপ্তাহে) এই বাজারের সব থেকে ভাল পাটের দর মণপ্রতি ৩২শ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর একটু নিম্নমানে পাটের দর ২৮শ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

ভরা মৌসুমে বাজারে পাটের আমদানি কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সচ্ছল চাষিরা বাড়তি লাভের আশায় বাজারে পাট বাজারে কম তুলছেন।

বোয়ালমারীর ঘোষপুর এলাকার পাট চাষী আশুতোষ মালো জানান, ক্ষেতে পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে, তবে খরচ ও যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি চাষীদের। এই কারণে আমরা মণপ্রতি ৩২ হাজার থেকে ৩৫শ টাকা দরে পেলে বেশ খুশি হতাম।

এই পাট চাষীর মতো সালথার আরেক চাষী নাছির উদ্দিন জানান, সরকার যে ভাবে প্রতিবছর ধান, গমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সেভাবে পাটেরও দর নির্ধারণ থাকলে আমরা চাষীরা ন্যায্যমূল্য পেতাম।

এদিকে, পাটের দর প্রসঙ্গে ফরিদপুর গোল্ডেন জুটে মিলের পরিচালক মহাসিনুল ইসলাম গুড্ডু বলেন, আমরা যারা পাটকলের সঙ্গে যুক্ত তাদের দাবি, মিলের উৎপাদিত পাটপণ্য বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে যদি পাটের ক্রয়মূল্যে ব্যবধান বেশি থাকে তাহলে মিল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে পণ্য উৎপাদন মূল্যের সঙ্গে হিসাব মিলিয়ে কাঁচা পাটের দর নির্ধারণ দরকার। এতে উভয়ই লাভবান হবে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী জানান, সোনালি আঁশ খ্যাত ফরিদপুরে উৎপাদিত পাটের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। এ জেলার চাষীরা অন্য যেকোনো ফসলের তুলনায় অনেক বেশি পাটের আবাদ করেন।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল। তবে এর থেকে বেশি উৎপাদন হয়েছে। পাটের দরের বিষয়ে এই কৃষি কর্মকতা বলেন, বর্তমান বাজারের যে দরে পাট বিক্রয় হচ্ছে তাতে কৃষকের লাভের পরিমাণ একটু কম। কারণ মৌসুমের শুরুতে তাদের আবাদ খরচ একটু বেশি পড়েছে।

তিনি বলেন, মণপ্রতি ৩২শ থেকে ৩৫শ টাকা দর পেলে কৃষক ভাল লাভ পেতো ।

পিডিএসও/ইউসুফ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফরিদপুর,সোনালি আঁশ,পাট,উৎপাদন,দাম,হতাশা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close