মেহেদি জামান লিজন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

  ৩০ জুলাই, ২০২১

কারিগরদের দুর্দিন

হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ-বেতের পণ্য

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার গুটি কয়েক মানুষ। এই বাঁশ আর বেতই বর্তমানে তাদের জীবিকার প্রধান বাহক। কিন্তু দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত গুটি কয়েক কারিগররা। তবুও বাপ-দাদার এই পেশাকে এখনও ধরে রেখেছে কিছু সংখ্যক পরিবার।

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ত্রিশাল উপজেলায় বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি মনকাড়া বিভিন্ন জিনিসের জায়গা করে নিয়েছে স্বল্প দামের প্লাস্টিক ও লোহার তৈরি পণ্য। তাই বাঁশ ও বেতের তৈরি সেই পণ্যগুলো এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। কদর না থাকায় গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় আকর্ষণীয় আসবাবপত্র। অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে আজ অনেকে অন্য পেশার দিকে ছুটছে। শত অভাব অনটনের মাঝেও উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক এই পেশা ধরে রেখেছেন।

ত্রিশাল পৌরসভা সংলগ্ন গোহাটা মাঠ, ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং সংলগ্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১০-১৫টি পরিবার এখনো সেই শিল্পের ওপর ভরসা করে বেঁচে আছেন। কেউ কেউ হিমশিম খাচ্ছেন পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে।

কয়েক দশক আগে ময়মনসিংহ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হতো এই কারিগরদের তৈরি এই সব বাঁশ ও বেতের পণ্যগুলো। অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাঁশ শিল্প আজ হুমকির মুখে। বাঁশ ও বেত থেকে তৈরি সামগ্রী বাচ্চাদের দোলনা, তালায়, র‌্যাগ, পাখা, ঝাড়ু, টোপা, ডালী, মাছ ধরার পলি, বেড়া, খলিশানসহ বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র গ্রামঞ্চলের সর্বত্র বিস্তার ছিল।

এক সময় যে বাঁশ ২০ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যেত সেই বাঁশ বর্তমান বাজারে কিনতে হচ্ছে দুইশত থেকে আড়াইশ টাকা সেই সাথে বাড়েনি এসব পণ্যের দাম। জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ ঘরবাড়ি নির্মাণে যে পরিমাণ বাঁশের প্রয়োজন সে পরিমাণ বাঁশের ঝাড়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এই ক’টি পরিবার বিভিন্ন সময়ে আসা সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই বাপ-দাদার এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে গিয়ে আজ তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।

স্থানীয় কারিগর মকবুল, আকরাম, আতিকুলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ত্রিশালে আমরা হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও এ কাজে নিয়োজিত আছি। একটি বাঁশ থেকে ১০-১২টি ডালি তৈরি হয়। সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পণ্য থেকে ১০-২০টাকা করে লাভ থাকে। তবে আগের মত আর বেশি লাভ হয় না বর্তমানে। তাই এই সীমিত লাভ দিয়ে পরিবার চালানো অতি কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

তারা আরও জানান যে, খেয়ে-না খেয়ে অতি কষ্টে তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী এই বাঁশ শিল্প টিকে রাখতে ধারদেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে বেশি লাভ দিয়ে টাকা নিয়ে কোনো রকম বাপ-দাদার এই পেশাকে আকঁড়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমাদের এই শিল্পটির উন্নতিকল্পে যদি সরকারি ভাবে অল্প লাভে ঋণ দেয়া হয় তাহলে বাঁশ শিল্পের কারিগররা স্বাবলম্বী হবে আর হারিয়ে যাওয়া এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।

পিডিএসও/ইউসুফ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ত্রিশাল,ময়মনসিংহ,বাঁশ-বেতের পণ্য,হারিয়ে যাচ্ছে,কারিগরদের দুর্দিন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close