খুলনা ব্যুরো

  ২৯ জুলাই, ২০২১

টানা বর্ষণে কয়রা-পাইকগাছার জনজীবন বিপর্যস্ত

নিম্ন চাপের কারণে তিন দিনের টানা বর্ষণে খুলনার উপকূলবর্তী পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতাসহ চিংড়ি ঘের, আমন বীজতলা ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি কাঁচা ঘরও ধসে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে পাইকগাছা পৌরসভা, গদাইপুর, রাড়ুলী, চাঁদখালী, লস্কর, কপিলমুনি ও হরিঢালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। ভারী বর্ষণের ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। অনেক রাস্তা ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। অসংখ্য চিংড়ি ঘের, আমন বীজতলা ও ফসলি জমি তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাড়ুলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার জানিয়েছেন, অতিবর্ষণের ফলে রাড়ুলীর মালোপাড়ার ৮/১০টি মাটির ঘর ভেঙে কপোতাক্ষ নদে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ বুলু।

অপরদিকে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টির পানিতে খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থৈ থৈ করছে চারিদিক। এদিকে বৃষ্টিতে ভিজে নিজেদের মৎস্য ঘের বাঁচাতে ব্যস্ত সময় পার করছে মৎস্য চাষিরা। কেউ মাটি দিয়ে রাস্তা উঁচু করছে, কেউ বা নেট জাল দিয়ে মৎস্য ঘের রক্ষা করতে ব্যস্ত রয়েছে।

জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে কয়রা উপজেলায় তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। ডুবেছে বসতভিটাসহ ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের। গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কয়রার জনজীবন। জলাবদ্ধতায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বীজতলা, ফসলের মাঠ, পুকুর, রাস্তাঘাট ও বাড়ির আঙিনা তলিয়ে গেছে।

উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের মৎস্য চাষি হরষিত মণ্ডল বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই চলছিল আমার সংসার। আমার উপার্জনের উৎস মৎস্য ঘের। কিন্তু দুইদিন ধরে চলা বৃষ্টিতে সব ভেসে যাওয়ার উপক্রম। তাই সকাল থেকে ঘেরের রাস্তায় নেটজাল দিচ্ছি।

তিনি বলেন, টানা বৃষ্টিতে সব ভেসে যেতে বসেছে। বৃষ্টি থামছে না। বৃষ্টি থেমে গেলে হয়তো ঘেরটি বাঁচাতে পারতাম।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, দুর্ভোগ যেন কোনো অবস্থাতে পিছু ছাড়ছে না কয়রার মানুষের। কখনও নোনা পানির তোড়ে আবার কখনও অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে কয়রা সদর ইউনিয়নে অতি বর্ষণের ফলে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে চরম জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। পুরো ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিশাল এ এলাকার পানি নিষ্কাশন কিছু সংখ্যক স্লুইসগেট দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, কয়রায় শুষ্ক মৌসুমে নেই সেচ ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে নেই পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ধসে যাওয়ার সাড়ে তিন বছরেও নির্মাণ হয়নি কয়রা সদরের গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন স্লুইসগেট। পানি নিষ্কাশনের খালগুলো অবৈধ দখলদার আর ইজারাদারা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ ও নেট-পাটা দিয়ে পানির প্রবাহে বাঁধাসৃষ্টি করছে। দ্রুত ওয়ার্ড ভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগের দাবি জানান তিনি।

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কয়রা,খুলনা,বৃষ্টি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close