কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
এডিপি’র প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা আদায়
এডিপি’র প্রকল্প কাজ বাস্তবায়ন না করেই এক বছর আগে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্য লিখিত অভিযোগ শুনে তড়িঘড়ি করে ইউপি চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে আংশিক টাকা হস্তান্তর করেছেন। এ নিয়ে ইউনিয়নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ২ নং পতনউষার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এডিপি’র অর্থায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিজে প্রকল্প কাজ বাস্তবায়ন করবেন বলে ঠিকাদারের কাছ থেকে এক বছর পূর্বে চারটি প্রকল্পে জোরপূর্বক টাকা চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আদায় করেন।
এদিকে ১৫ জুলাই পতনউষার ইউনিয়ন পরিষদের ১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুই ইউপি সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিশেষ প্রণোদনার নগদ টাকা ও চাল বিতরণ না করা এবং এলজিএসপি, এডিপি, টিআর, কাবিখাসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগ দেয়ার পর এডিপি’র বরাদ্ধকৃত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের কয়েকটি প্রকল্পে চেয়ারম্যান তওফিক আহমদ আংশিক টাকা প্রদান করেন। এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্যাকেজ কোড এডিপি/২০১৯-২০/কমল/০২ এর দুই নাম্বার পার্টে পতনউষারের গোপীনগর ঈদগাহে সিসি কাজে বরাদ্ধকৃত প্রায় এক লক্ষ টাকার মধ্যে ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
গোপীনগর ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মো. মাহমুদুর রহমান জানান, ১৭ জুলাই রাতে আমার বাড়িতে এসে চেয়ারম্যান সাহেব নগদ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
ওই একই প্যাকেজ কোডে গোবিন্দপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদে বৈদ্যুতিক কাজের জন্য বরাদ্ধ হয় এক লক্ষ টাকা। মসজিদ কমিটির সভাপতি মাসুক আহমদ বলেন, এডিপি’র মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা বরাদ্ধের দেড় বছর পর চেয়ারম্যান সাহেব ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ইউনিয়নের গোবিন্দপুর জিওর আখরার বাউন্ডারি দেয়ালের জন্য বরাদ্ধ হয় এক লক্ষ টাকা।
জিওর আখরা কমিটির সম্পাদক দয়াময় দাস বলেন, দুই দফায় চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
ইউনিয়নের সোনারগাঁও ভৈরবথলির বাউন্ডারি দেয়ালের জন্য বরাদ্ধ হয় এক লক্ষ টাকা।
সোনারগাঁও ভৈরবথলি কমিটির সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, কোন কাজ হয়নি। তবে চেয়ারম্যান সাহেব ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। লক্ষ্মীপুর সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের সভাপতি সুদর্শন দেবনাথ বলেন, মণ্ডপের কাজের জন্য ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্ধের কথা শুনেছি। তবে চেয়ারম্যান সাহেব ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।
পতনউষার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রিপন ইসলাম ও সায়েক আহমদ বলেন, এডিপি’র এক বছর আগের বরাদ্ধকৃত প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা ঠিকাদারের। তা না করে চেয়ারম্যান ঠিকাদারের কাছ থেকে কয়েকটি প্রকল্পের টাকা এনে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেন। আমরা অভিযোগ দেয়ার পর আংশিক টাকা প্রদান করছেন। তবে মোটেও এগুলো ঠিক হয়নি।
অভিযোগ বিষয়ে পলাশ এন্ড পরশ এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো. মনাফ বক্ত বলেন, ‘এডিপি’র টেন্ডারকৃত পতনঊষার ইউনিয়নে মোট আট লক্ষ টাকার কাজ পাই। তবে কাজের এই অর্থ থেকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার কাজ একভাবে ফোর্স করে নিয়ে যান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তওফিক আহমদ বাবু। তিনি মসজিদের ইলেকট্রিক কাজ ও ক্লাবের কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে টাকা নেয়ার জন্য আমাকে পীড়াপীড়ি করেন। আমি তাতে রাজি না হলে আমাকে হুমকি দিলে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ১০ শতাংশ ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স ও ৫ শতাংশ লেসসহ ১৫ শতাংশ বাদ দিয়ে বাকি টাকা চেয়ারম্যান সাহেবকে দিয়ে দেই। এরপর কাজের জন্য চেয়ারম্যানকে বার বার তাগিদ দিলেও তিনি কাজ করছেন করবেন বলে জানান। এখন দুই মেম্বার অভিযোগ দেয়ার পর চেয়ারম্যান প্রায় একবছর পর ষাট হাজার হারে নগদ টাকা প্রদান করেন।’
তবে অভিযোগ বিষয়ে পতনউষার ইউপি চেয়ারম্যান তওফিক আহমদ বলেন, জনপ্রিয়তায় ঈর্শ্বানিয়তা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে তারা উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা ধর্মীয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বরাদ্ধের তালিকা দেই। আমি বরাদ্ধ দেয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানের নেতারা আমার কথা বলেছেন। ষড়যন্ত্রের কারণে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আর এডিপি বাস্তবায়ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করেন না। চলমান কোন কাজ যদি থাকে, কাজের সাথে মিল থাকলে টাকা পয়সার বিষয়ে নিগোজিশন করে দেই।
এব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডি কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
পিডিএসও/ জিজাক