আরিফ খাঁন, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)

  ২০ জুলাই, ২০২১

বিষের বোতল হাতে এক সন্তানের জননী প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে

পাবনার বেড়া উপজেলায় বিয়ের দাবিতে ‘বিষের বোতল’ হাতে নিয়ে শহীদুল শেখ (২৮) নামের এক যুবকের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন জাকিয়া খাতুন (২৫) নামের এক তরুণী। উপজেলার মাশুন্দিয়া ইউনিয়নের রতনগঞ্জ মধ্যপাড়া গ্রামে মঙ্গলবার সকালে তরুণীটি সেখানে অবস্থান নেন। তবে শহীদুল শেখ তরুণীর উপস্থিতি টের পেয়েই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

ওই তরুণীর আগে বিয়ে হয়েছিল এবং তার তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। অন্যদিকে শহীদুল বেড়া উপজেলায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে সহকারী হিসাবরক্ষক পদে চাকুরি করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, সুজানগর উপজেলার বিরাহিমপুর গ্রামের জাকিয়া খাতুনের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে বেড়ার রতনগঞ্জ মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত খলিল মোল্লার ছেলে মান্নান মোল্লার বিয়ে হয়। চাকুরির কারণে বিয়ের পর থেকে তাঁরা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। বিয়ের বছর দুয়েক পর তাঁদের একটি পুত্র সন্তান হয়।

এদিকে শহীদুল শেখ ও মান্নানের বাড়ি একই গ্রামে ও একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই সুবাদে শহীদুল মান্নানের বাসায় অবাধে যাতায়াত করতেন। বছর তিনেক আগে জাকিয়ার সঙ্গে শহীদুলের প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে সপ্তাহ খানেক আগে জাকিয়া ও মান্নানের বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়।

বিয়ের দাবিতে অবস্থান গ্রহণকারী জাকিয়া সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, শহীদুলের সঙ্গে তার তিন বছরের সম্পর্ক। এই সম্পর্কের বিষয় নিয়ে স্বামীর বাড়িতে গিয়ে শহীদুল নানা কুৎসা রটান। যে কারণে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার চরম অশান্তির সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও জানান, শহীদুলের প্ররোচনাতেই স্বামীর সঙ্গে তার তালাক হয়ে যায়। কথা ছিল তালাকের পর শহীদুল তাকে বিয়ে করবেন। কিন্তু এখন তিনি (শহীদুল) বিয়ে করতে অস্বীকার করছেন। ফলে নিরুপায় হয়ে তিনি বিষের বোতল হাতে নিয়ে প্রেমিক শহীদুলের বাড়িতে উঠেছেন। এখন শহীদুল বিয়ে না করলে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন বলে জানান।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য মাশুন্দিয়া ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম মীমাংসার জন্য ছেলের পরিবারের কাছ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু মেয়েটি মীমাংসার বিষয়ে কিছু জানে না। এসময় জাকিয়া খাতুনের আগের স্বামী এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমাকে কবে ডিভোর্স দিয়েছে তা আমি জানিনা। সপ্তাহখানেক আগে আমি ডিভোর্সের পেপার পেয়েছি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি মাস শেষে যা বেতন পাই তা আমার স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেই সে এমন কাজ করবে তা জানা ছিলনা। তবে সে আমার অনেক টাকা পয়সা নিয়ে গেছে। আড়াই বছর আগে শহীদুুলের চাকরির সময় পাঁচ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য রবিউল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে শহীদুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে স্থানীয় মাশুন্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিরোজ হোসেন বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর ওই বাড়িতে আমি চৌকিদার ও নারী ইউপি সদস্যকে পাঠিয়েছি। এ ছাড়া বিষয়টি ইউএনও ও আমিনপুর থানার ওসিকেও জানিয়েছি। ঘটনার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখছি ও বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে আমিনপুর থানার ওসি মো. রওশন আলী বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি এবং এ ব্যাপারে আমরা খোঁজ রাখছি। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. সবুর আলী বলেন, ‘শহীদুল আমাদের উপজেলা পরিষদেই চাকুরি করেন বলে শুনেছি। তাই মেয়েটি আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে এ বিষয়ে আমি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারবো। আমি মেয়েটিকে বাড়ি ফিরে যেতে এবং আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে খবর দিয়েছি।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বেড়া,বিষের বোতল,বিয়ের দাবি,অনশন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close