শেরপুর প্রতিনিধি

  ০১ জুলাই, ২০২১

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চলের ৩৫ গ্রাম প্লাবিত

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি উজান থেকে নেমে গিয়ে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এতে উপজেলার সদর, হাতিবান্দা ও ধানশাইল ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ঝিনাইগাতীতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। সেইসঙ্গে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বুধবার ভোরে প্রবল বেগে মহারশি নদীর রামেরকুড়া এলাকার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ দিয়ে ঝিনাইগাতী বাজারে প্রবেশ করে। এতে ঝিনাইগাতী বাজারে অবস্থিত উপজেলা পরিষদ ভবন, ডাকঘর, সাবরেজিস্ট্রার, নলকুড়া ভূমি কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওসহ সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবনের চারপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। বর্তমানে উজানের পানি নেমে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করেছে।

চতল গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বাড়িতে দুইদিন ধরে পানি উঠছে, এখন আমরা পানিবন্দি। পানি উঠায় দুইদিন ধরে বাড়িতে চুলা বন্ধ। মুড়ি খেয়ে আছি, হাঁসগুলো পানিতে ভেসে গেছে। এখন গরু-ছাগল নিয়ে চরম বিপদে আছি। অথচ মেম্বার, চেয়ারম্যান বা প্রশাসনের কেউ খোঁজ-খবর নিতে এলো না।’

সারিকালিনগর গ্রামের কৃষক মুকবুল হোসেন বলেন, ‘ঢলের পানিতে তার ৪টি পুকুরের প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।’ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল কুদ্দুস বলেন, উপজেলার মহারশি নদীর দিঘীরপাড় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে চতল, মাটিয়াপাড়া, রামনগর, সুরিহারা, দড়িকালিনগর, কালিনগর, সারিকালিনগরসহ ১০টি গ্রামের শত শত ঘরবাড়িতে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। কৃষকদের আমন ধানের বীজতলা, বিভিন্ন সবজি ফসল ও শতাধিক পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।

হাতিবান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আলী আকবর বলেন, ‘উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে এসে আমার ইউনিয়নের বৈলতেল, খিলাগাঁও, পটলপাড়া, কবিরাজপাড়া, ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া, কোনাপাড়া, মারুয়াপাড়া, কামারপাড়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রামে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। এতে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমন ধানের বীজতলা, সবজি ও প্রায় ১০০ পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।’

ধানশাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তার ইউনিয়নের কান্দুলী, মাঝাকান্দুলী, দাড়িয়ারপাড়, নামাপাড়াসহ ৫টি গ্রামে ঢলের পানি প্রবশে করে আমন ধানের বীজতলা, সবজি ও প্রায় ৩০ পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া আহাম্মদনগর-মহনগঞ্জ নির্মাণাধীন সড়কের কয়েকটি অংশ ভেঙে গেছে।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সিরাজুস সালেহীন বলেন, ‘প্রাথমিক হিসাবে ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১৫ হেক্টর জমির ৭৫টি পুকুরের ৯ দশমিক ২ মেট্রিকট্রন মাছ ও ১০ লাখ পোনা মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ২১ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলমান আছে, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলের পানি বিভিন্ন এলাকাতে প্রবেশ করেছে। এতে প্রায় ৩০ হেক্টর জমির বীজতলা ও ১০ হেক্টর জমির সবজি পানিতে নিমজ্জিত আছে। রাতের মধ্যে পানি নেমে গেলে, আশা করছি ফসলের কোন ক্ষতি হবে না।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শেরপুর,পাহাড়ি ঢল,প্লাবিত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close