এস.এইচ.এম. তরিকুল, রাজশাহী

  ২২ জুন, ২০২১

হুমকির মুখে গোদাগাড়ীর পদ্মা তীর রক্ষা বাঁধসহ ৩ টি গ্রাম

রাজশাহীতে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ বালুকারবারীদের দৌরাত্ম্য

প্রশাসনের নাকের ডোগায় পরিচালিত রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বন্ধই হচ্ছে না অবৈধ বালুকারবারীদের দৌরাত্ম্য। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই অবৈধ বালুকারবারের কারণে স্থানীয় সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে।

অবৈধ বালুকারবারের কারণে ১৫টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা চরম ঝুঁকির মধ্যদিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে চলাচল করছে। ফলে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়াও ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় হুমকির মুখে পড়েছে অবৈধ বালুমহালের পাশে অবস্থিত পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধসহ তিনটি গ্রাম। সেই সাথে নদী ভাঙনের শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে পার্শ্ববর্তী এ তিনটি গ্রামের জনবসতি।

এছাড়াও ভাঙন শঙ্কায় রয়েছে সেখানকার মাদ্রাসা ও মসজিদ। এ কারণে অবৈধ বালুকারবারীর বিরুদ্ধে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে তাদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ফলে এদের দৌরাত্বে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী অবৈধ বালুকারবারীর কার্যক্রম বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

আর দাখিলকৃত ওই স্মারকলিপির কপি সোমবার বিকেলে ইমেল যোগে সাংবাদিকদেরকে পাঠানো হয়। রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে দেয়া ওই স্মারকলিপিতে তিন পৌরকাউন্সিলরসহ জেলা পরিষদের এক প্যানেল চেয়ারম্যানেরও সীল-স্বাক্ষর রয়েছে।

স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অবৈধ সুবিধার মাধ্যমে ম্যানেজ করে তারা অবাধে এই অবৈধ বালুকারবার চালাচ্ছে। আর এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী আনারুল বিশ্বাস ও তার ছেলে রোমেন বিশ্বাস রয়েছেন।

একটি সিন্ডিকেট গোদাগাড়ী উপজেলার জোতগোসাইদাস ও ভগবন্তপুর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মজুদ এবং সেখান থেকে পরিবহন করছে। যে সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকাবাসীসহ বালুমহালের বৈধ ইজারাদাররা। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন এখানকার বৈধ বালুমহাল ইজারাদাররাও।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, পদ্মা থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এতে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধ, মাদ্রাসা ও মসজিদ। এছাড়াও নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে তিনটি গ্রাম। এছাড়াও ভারি ট্রাক-লরি ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের কারণে এলাকার সড়কগুলো ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। দিনরাত বালু পরিবহনের কারণে এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া সড়কগুলো নষ্ট হয়ে সরকারের বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত করে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরিত রাজশাহী জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ রবিউল আলম জানান, প্রশাসনের নাকের ডোগায় এই অবৈধ বালু কারবারে তারা অতিষ্ঠ। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেয়া হলেও তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। অবৈধ এই বালু কারবারের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। ফলে বাধ্য হয়ে গত রবিবার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এসময় সেখানকার বৈধ বালুমহাল ইজারাদার জাহাঙ্গীর হোসেন ও হাসিবুর রহমানের উদৃতি দিয়ে জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তারা প্রায় ১৩ কোটি টাকায় বালুমহাল দুইটি ইজারা নিয়েছে। কিন্তু অবৈধ বালুকারবারে তারা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।

অভিযোগ তুলে রবিউল আলম আরও বলেন, শুধু অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেই তারা খান্ত হচ্ছেনা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বৈধভাবে বালু উত্তোলনেও বাধা সৃষ্টি করাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে তাদের বৈধ ব্যবসা। এভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ইজারারদের অর্ধেক টাকাও তোলা দায় হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন।

এসময় জনস্বার্থে দাখিলকৃত অভিযোগের মধ্যে বৈধ বালু ব্যবসায়ীদের জড়ানোর বিষয়ে আপনারা প্রভাবিত হয়েছেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ায় মানবিক কারণে তাদের ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজশাহী,বালুকারবারী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close